অল্প বয়সে বিয়ে করার উপকারিতা ইসলামিক
অল্প বয়সে বিয়ে করার উপকারিতা ইসলামিক সম্পর্কিত আলোচনা নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজকের এই আর্টিকেলটিতে। আপনি কি অল্প বয়সে বিয়ে করার উপকারিতা জানান জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে খোজাখুজি করছেন। তাহলে আপনাকে এই ওয়েবসাইটে স্বাগতম।
চলুন, সময় নষ্ট না করে আপনার কাঙ্খিত আলোচনার বিষয়বস্ত অল্প বয়সে বিয়ে করার উপকারিতা ইসলামিক সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা জেনে নিন।
অল্প বয়সে বিয়ে করার উপকারিতা ইসলামিক
ইসলামে অল্প বয়সে বিয়ে করা (Early Marriage) একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় বিষয় বলে বিবেচিত হয়েছে, যদি তা পরিপক্কতা, দায়িত্ববোধ ও সঠিক উদ্দেশ্যের সাথে সম্পন্ন হয়।
নিচে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে অল্প বয়সে বিয়ে করার উপকারিতা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো—
১. সুন্নাহ অনুযায়ী আমল: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন —“হে তরুণ সমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে নেয়।” (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, তরুণ বয়সে বিয়ে করা সুন্নাহ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উপায়।
২. পাপ থেকে দূরে থাকার উপায়: অল্প বয়সে বিয়ে করলে যুবক-যুবতীরা নৈতিকভাবে সুরক্ষিত থাকে, কারণ বিবাহ অবৈধ সম্পর্ক, জিনা, দৃষ্টি পাপ ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে।
আল্লাহ বলেন: “তারা যেন তাদের লজ্জাস্থান রক্ষা করে।” (সূরা আন-নূর ২৪:৩০-৩১)। বিবাহ হলো সেই মাধ্যম যা মানুষকে পাপের পথ থেকে রক্ষা করে।
৩. মানসিক ও আত্মিক প্রশান্তি লাভ: আল্লাহ তায়ালা বলেন —“তোমরা একে অপরের মধ্যে প্রশান্তি পাবে।” (সূরা আর-রূম ৩০:২১)
বিয়ের মাধ্যমে মানুষ মানসিক শান্তি, ভালোবাসা ও সঙ্গ লাভ করে। তরুণ বয়সে এই মানসিক ভারসাম্য জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৪. পারিবারিক জীবনের অভিজ্ঞতা ও স্থিতিশীলতা: অল্প বয়সে বিয়ে করলে দম্পতি একে অপরের সাথে সহজে মানিয়ে নিতে পারে, পারস্পরিক সমঝোতা তৈরি হয় এবং তারা ধীরে ধীরে পরিণত দাম্পত্য জীবনে অভ্যস্ত হয়।
৫. সন্তান ধারণ ও বংশ বৃদ্ধি: ইসলামে বংশ বৃদ্ধি উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন — “তোমরা এমন নারীর সাথে বিবাহ করো, যাদের দ্বারা তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, কারণ আমি কিয়ামতের দিন তোমাদের সংখ্যার উপর গর্ব করবো।” (আবু দাউদ)
অল্প বয়সে বিয়ে করলে স্বাভাবিকভাবে সন্তান জন্মের জন্য স্বাস্থ্য ও সময় দুটোই অনুকূল থাকে।
৬. সমাজে শালীনতা ও নৈতিকতা রক্ষা: যুব সমাজ যদি সঠিক সময়ে বিয়ে করে, তবে সমাজে অশ্লীলতা, অবৈধ সম্পর্ক ও অনৈতিক কার্যক্রম কমে যায়। এতে সমাজে নৈতিকতা ও ইসলামি আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়।
৭. আত্মনিয়ন্ত্রণ ও দায়িত্ববোধ শেখা: অল্প বয়সে বিয়ে মানুষকে দায়িত্বশীল হতে শেখায় — পরিবার, স্ত্রী/স্বামী, ভবিষ্যৎ সন্তানদের প্রতি কর্তব্যবোধ তৈরি হয়, যা তাকে নৈতিকভাবে শক্তিশালী করে তোলে।
৮. রিজিক বৃদ্ধি: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন — “যে ব্যক্তি বিবাহ করে, সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করেছে। সুতরাং বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।” (সহীহ বুখারী)
বিয়ে রিজিক বৃদ্ধি করে। কারণ আল্লাহ বিবাহিতদের জন্য রিজিক সহজ করে দেন।
অল্প বয়সে বিয়ে করা ইসলামে উৎসাহিত, যদি উভয়ের মধ্যে পরিপক্কতা, সম্মতি, দ্বীনদারি ও দায়িত্ববোধ থাকে। এটি শুধু ব্যক্তিগত শান্তির জন্য নয়, সমাজের নৈতিক ও ইসলামিক কাঠামো রক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
অল্প বয়সে বিয়ে করার হাদিস
নিচে অল্প বয়সে বিয়ে করার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ-র বাণীসমূহ (হাদীস) সুন্দরভাবে তুলে ধরা হলো:
ক) নবী ﷺ তরুণদের বিয়ে করতে উৎসাহ দিয়েছেন
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ ﷺ:
"يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ، فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ."
(সহীহ বুখারী ৫০৬৬, সহীহ মুসলিম ১৪০০)
বাংলা অনুবাদ: “হে তরুণ সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে কেউ বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে। কারণ বিয়ে দৃষ্টি সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে রক্ষা করে।
আর যে সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোযা রাখে, কারণ রোযা তার জন্য ঢালস্বরূপ।” এই হাদীস স্পষ্টভাবে তরুণ বয়সে বিয়ে করার প্রতি উৎসাহ দেয়।
খ) বংশবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিয়ের উৎসাহ
عَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ:
"تَزَوَّجُوا الْوَدُودَ الْوَلُودَ فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمُ الْأُمَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ."
(সুনান আবু দাউদ ২০৫০, সুনান আন-নাসাঈ ৩২২৭)
বাংলা অনুবাদ: “তোমরা এমন নারীকে বিয়ে করো, যে স্নেহশীল ও সন্তানপ্রসবক্ষম; কারণ আমি কিয়ামতের দিন তোমাদের সংখ্যা নিয়ে গর্ব করবো।”
এখানে নবী ﷺ তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা জীবনসঙ্গী বেছে নিয়ে সময়মতো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
গ) বিয়ে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করে
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ:
"مَنْ تَزَوَّجَ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ نِصْفَ الدِّينِ، فَلْيَتَّقِ اللَّهَ فِي النِّصْفِ الْبَاقِي."
(আল-বায়হাকি, শু‘আবুল ঈমান ৫৪৮৬)
বাংলা অনুবাদ: “যে ব্যক্তি বিয়ে করলো, সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করলো; সুতরাং বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।”
অর্থাৎ, বিয়ে মানুষকে পরিপূর্ণ দ্বীনদার হতে সাহায্য করে — আর তরুণ বয়সে বিয়ে করলে এই সুরক্ষা তাড়াতাড়ি লাভ করা যায়।
ঘ) নবী ﷺ নিজেও তরুণ বয়সে বিবাহ করেছিলেন
রাসূলুল্লাহ ﷺ ২৫ বছর বয়সে হযরত খাদিজা (রাঃ)-এর সাথে বিবাহ করেন। এটি মুসলিম তরুণদের জন্য এক সুন্দর দৃষ্টান্ত। যে পরিপক্ব বয়সে বিয়ে করা সুন্নাহ।
ইসলামে অল্প বয়সে বিয়ে করা মানে এমন এক বয়সে বিয়ে করা, যখন ব্যক্তি শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে প্রস্তুত এবং পাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চায়। হাদীসগুলোতে নবী তরুণদের প্রতি স্পষ্টভাবে আহ্বান জানিয়েছেন—
“যে বিয়ে করতে পারে, সে যেন বিয়ে করে।”
অল্প বয়সে বিয়ে করার অপকারিতা
নিচে অল্প বয়সে বিয়ে করার অপকারিতা (সংক্ষেপে) দেওয়া হলো — ইসলামী ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভারসাম্য রেখে। অল্প বয়সে বিয়ের অপকারিতা (সংক্ষেপে) আলোচনা করা হলো:
পরিপক্কতার অভাব: তরুণ-তরুণী অনেক সময় মানসিক ও আবেগিকভাবে পরিপক্ক না থাকায় দাম্পত্য জীবনে ঝগড়া ও ভুল বোঝাবুঝি হয়।
দায়িত্ববোধের ঘাটতি: সংসার চালানো, সিদ্ধান্ত নেওয়া বা সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব নিতে অক্ষম হতে পারে।
আর্থিক অস্থিরতা: অনেক তরুণের উপার্জন বা আর্থিক স্থিতি না থাকায় সংসারে সমস্যা সৃষ্টি হয়।
শিক্ষা ব্যাহত হওয়া: অল্প বয়সে বিয়ে করলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় বা মনোযোগ নষ্ট হয়।
স্বাস্থ্যঝুঁকি (বিশেষ করে নারীর জন্য): কম বয়সে সন্তান জন্ম দিলে শারীরিক জটিলতা ও মা-সন্তান দুজনেরই ঝুঁকি থাকে।
বিবাহ বিচ্ছেদের আশঙ্কা: অভিজ্ঞতার অভাব ও পরিণত চিন্তার ঘাটতির কারণে সম্পর্ক টেকসই নাও হতে পারে।
মানসিক চাপ ও হতাশা:তরুণ বয়সে সংসারের চাপ অনেকের মধ্যে মানসিক অশান্তি সৃষ্টি করে।
ইসলাম কী বলে:ইসলাম অল্প বয়সে বিয়ে করতে উৎসাহ দেয়, তবে শর্ত হলো— মানসিক, শারীরিক ও আর্থিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।
অর্থাৎ, অপরিপক্ক অবস্থায় বিয়ে করলে তা বরকতের বদলে সমস্যার কারণ হতে পারে।
অল্প বয়সে বিয়ে নিয়ে ইসলামিক উক্তি
নিচে অল্প বয়সে বিয়ে নিয়ে ইসলামিক উক্তি (Islamic Quotes) বা বাণীগুলো সুন্দরভাবে সাজানো হলো— যাতে কুরআন, হাদীস ও ইসলামিক চিন্তাধারা থেকে বোঝা যায় কেন তরুণ বয়সে বিয়ে করা গুরুত্বপূর্ণ।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: "হে তরুণ সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে। কারণ এটি দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে পবিত্র রাখে।" (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫০৬৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৪০০)
অর্থ: অল্প বয়সে (যৌবনে) বিয়ে করলে মানুষ পাপ থেকে রক্ষা পায় এবং নিজের চরিত্র সংযত রাখতে পারে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: "যে ব্যক্তি বিয়ে করল, সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করল; সুতরাং বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।" (আল-বায়হাকি, শু‘আবুল ঈমান: ৫৪৮৬)
অর্থ: বিয়ে ইসলামে এমন এক সুরক্ষা যা মানুষকে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করতে সাহায্য করে—তরুণ বয়সে এই সুরক্ষা লাভ করা শ্রেয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: "তোমরা এমন নারীকে বিয়ে করো, যে স্নেহশীল ও সন্তানপ্রসবক্ষম; কারণ আমি কিয়ামতের দিন তোমাদের সংখ্যার উপর গর্ব করব।" (সুনান আবু দাউদ: ২০৫০)
অর্থ: ইসলামে অল্প বয়সে বিয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে, যাতে বৈধ উপায়ে পরিবার গড়ে সমাজে সুস্থ বংশধারা চলমান থাকে।
কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন: "তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের বিয়ে সম্পন্ন করে দাও, এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ, তাদেরও। যদি তারা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহে তাদের ধনী করবেন।" (সূরা আন-নূর: ২৪:৩২)
অর্থ: আল্লাহ তাআলা নিজেই বলেছেন — বিয়ে দারিদ্র্য কমায়, রিজিক বৃদ্ধি করে। অল্প বয়সে হালাল উপায়ে জীবন শুরু করলে আল্লাহ তাতে বরকত দেন।
ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি পাপের ভয়ে নিজেকে সংযত রাখতে চায়, তার জন্য বিয়ে করা উত্তম; আর যে তরুণ নিজের দৃষ্টি ও নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে অক্ষম, তার জন্য বিয়ে করা ফরজের ন্যায় প্রয়োজন।” (ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, খণ্ড-২)
অর্থ: অল্প বয়সে নৈতিক সুরক্ষা ও আত্মসংযমের জন্য বিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হযরত উমর (রাঃ) বলেছেন: “বিয়ে করো, কারণ এটি তোমার চরিত্র রক্ষা করবে, দৃষ্টি সংযত করবে, এবং তোমাকে পাপ থেকে দূরে রাখবে।” (ইসলামি বাণী সংকলন, বায়হাকি)
অর্থ:যুব সমাজের নৈতিকতা ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য অল্প বয়সে বিয়ে একটি কার্যকর উপায়।
ইসলামিক প্রবাদ: "অল্প বয়সে হালাল সম্পর্ক শুরু করা মানে— নিজের চরিত্র, ঈমান ও ভবিষ্যৎ রক্ষা করা।"
অর্থ: তরুণ বয়সে ইসলামি পথে চলার সর্বোত্তম মাধ্যম হলো বিবাহ, যা জীবনকে পরিশুদ্ধ ও বরকতময় করে।
ইসলাম অল্প বয়সে বিয়ে করতে উৎসাহিত করেছে:
- পাপ থেকে বাঁচার জন্য,
- দৃষ্টি ও নফস নিয়ন্ত্রণের জন্য,
- পরিবার গঠনের জন্য,
- এবং আল্লাহর বরকত লাভের জন্য।

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url