রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) কী আমল করতেন

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল। আমরা তার উম্মত। আমরা নবীজির উম্মত হিসেবে রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) কী আমল করতেন সে সম্পর্কে জানা আমাদের ঈমানের অংশ। 
রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) কী আমল করতেন
তাহলে চলুন, আমার মুসল্লি ভাই ও বোনেরা আজকের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) কী আমল করতেন সে সম্পর্কে।চলুন আর্টিকেলটি মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) কী আমল করতেন

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের শেষ প্রহরে যে আমল করতেন, তা ছিল গভীর ইবাদত, আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার অসাধারণ উদাহরণ। তাঁর এই আমলগুলো কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায় বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে। এই সময়কে তিনি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান সময় হিসেবে গ্রহণ করতেন। নিচে রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আমলগুলোর একটি বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হলো:

১. তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও আদায়। রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) কী আমল করতেন

তাহাজ্জুদ নামাজ ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অন্যতম প্রিয় ইবাদত। তিনি প্রতিদিনের রাতের শেষ প্রহরে উঠে এটি আদায় করতেন এবং তাঁর সাহাবাদেরও এটি পড়তে উৎসাহ দিতেন। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন: "আপনি রাতে কিছু অংশ তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করুন; এটি আপনার জন্য নফল ইবাদত। হয়তো আপনার রব আপনাকে প্রশংসনীয় স্থানে দাঁড় করাবেন।" (সূরা আল-ইসরা: ৭৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণত ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন, তবে কখনো কখনো তা বেশি বা কম হত। নামাজে তিনি দীর্ঘ সুরা তিলাওয়াত করতেন এবং ধীরে ধীরে মনোযোগের সঙ্গে তা আদায় করতেন। তাঁর নামাজ এত দীর্ঘ হত যে কখনো কখনো পা ফুলে যেত। আয়েশা (রাঃ) একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন,

"হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তো আপনার আগের ও পরের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন, তাহলে কেন এত কষ্ট করেন?"

তিনি উত্তরে বললেন, "আমি কি তবে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ বান্দা হতে পারব না?" (সহীহ বুখারি, সহীহ মুসলিম)

২. কুরআন তিলাওয়াত। রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) কী আমল করতেন

তাহাজ্জুদ নামাজের সময় এবং এর বাইরেও রাসুলুল্লাহ (সা.) গভীরভাবে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। তিনি ধীরে ধীরে সুরা পাঠ করতেন, যেন প্রতিটি আয়াতের অর্থ উপলব্ধি করা যায়।

হাদিসে এসেছে: "রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতে কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং যখন কোনো আয়াত পড়তেন যাতে আল্লাহর দয়া উল্লেখ আছে, তখন তিনি তা পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করতেন। আর যখন কোনো আয়াতে শাস্তির কথা থাকত, তখন তিনি আল্লাহর কাছে শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার দোয়া করতেন।"(সহীহ মুসলিম)।

এতে বোঝা যায় যে, কুরআন তিলাওয়াত ছিল তাঁর রাতের ইবাদতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা তাঁর আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও ভক্তি প্রকাশ করে।

৩. দোয়া ও ইস্তিগফার। রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) কী আমল করতেন

রাতের শেষ প্রহর হলো দোয়া কবুলের সময়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই সময়ে আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে দোয়া করতেন। তিনি নিজের জন্য, উম্মতের জন্য এবং বিশ্ববাসীর জন্য কল্যাণ কামনা করতেন।

হাদিসে এসেছে: "আমাদের রব প্রতি রাতে পৃথিবীর আসমানে অবতরণ করেন যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকে এবং ঘোষণা দেন: ‘কেউ কি আছো আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কেউ কি আছো আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা প্রদান করব? কেউ কি আছো আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব?’" (সহীহ বুখারি, সহীহ মুসলিম)

রাসুলুল্লাহ (সা.) এই সময় আল্লাহর কাছে বারবার ক্ষমা চাইতেন এবং তাঁর উম্মতের জন্য ক্ষমা ও হিদায়াতের দোয়া করতেন।

৪. যিকর ও তাসবিহ। রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) কী আমল করতেন

রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর নাম স্মরণ করতেন এবং বিভিন্ন দোয়া ও তাসবিহ পাঠ করতেন। তাঁর প্রিয় একটি দোয়া হলো:

 "اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ.."

(হে আল্লাহ! আপনি আমার রব, আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার দাস। আমি আমার ক্ষমতা অনুযায়ী আপনার প্রতি অঙ্গীকার পূরণ করছি। আমি আমার কৃতকর্মের জন্য আপনার কাছে আশ্রয় চাই। 

আমি আপনার নেয়ামত স্বীকার করি এবং আমার পাপের কথাও স্বীকার করি। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন। আপনার ছাড়া কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না।)(সহীহ বুখারি)। এ ছাড়াও তিনি "সুবহানাল্লাহ", "আলহামদুলিল্লাহ", "আল্লাহু আকবার" ইত্যাদি যিকর বারবার করতেন।

৫. উম্মতের জন্য দোয়া করা। রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) কী আমল করতেন

রাসুলুল্লাহ (সা.) শুধু নিজের জন্য নয়, বরং তাঁর উম্মতের জন্য বেশি দোয়া করতেন। হাদিসে বর্ণিত আছে যে, তিনি উম্মতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন এবং তাদের জন্য কল্যাণ কামনা করতেন। তিনি আল্লাহর কাছে উম্মতের জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের প্রার্থনা করতেন।

৬. সেহরি গ্রহণ করা। রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) কী আমল করতেন

তাহাজ্জুদ শেষ করার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) সেহরি গ্রহণ করতেন। তিনি উম্মতকে সেহরি খাওয়ার প্রতি উৎসাহ দিতেন এবং বলতেন: "সেহরিতে বরকত রয়েছে, তাই তোমরা এটি পরিত্যাগ করো না।" (সহীহ বুখারি, সহীহ মুসলিম)। সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে তিনি রোজার জন্য প্রস্তুতি নিতেন এবং অন্যদেরও এ সময়ের বরকত লাভের উপদেশ দিতেন।

৭. আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক। রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) কী আমল করতেন

রাতের এই ইবাদতগুলোর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। তিনি রাতের নির্জনতাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সেরা সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতেন। এই সময় তাঁর দেহ-মন সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন থাকত।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রাতের ইবাদত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আত্মশুদ্ধি: তাহাজ্জুদ ও ইবাদতের মাধ্যমে নিজের আত্মা পবিত্র করা যায়।

২. নিয়মিততা: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আমলগুলো ছিল ধারাবাহিক এবং নিয়মিত। এটি আমাদের জীবনে ইবাদতের প্রতি গুরুত্বারোপের শিক্ষা দেয়।

৩. আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা: ইবাদত শুধুমাত্র প্রয়োজন পূরণের জন্য নয়, বরং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ।

৪. উম্মতের কল্যাণে দোয়া: শুধু নিজের জন্য নয়, বরং অন্যের জন্য দোয়া করাও গুরুত্বপূর্ণ।

৫. সময় ব্যবস্থাপনা: রাতের শেষ প্রহরকে ইবাদতের জন্য ব্যবহার করা মানে দিনের বাকি অংশকেও আরও বরকতময় করা।

উপসংহার। রাতের শেষ প্রহরে রাসুলুল্লাহ (সা.) কী আমল করতেন

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রাতের শেষ প্রহরের ইবাদত ছিল এক অনন্য উদাহরণ। তিনি এই সময়কে সর্বোত্তম কাজে ব্যয় করতেন এবং আল্লাহর কাছে নিজের দাসত্ব প্রকাশ করতেন। এই আমলগুলো আমাদের জন্যও শিক্ষা এবং অনুপ্রেরণার উৎস। যদি আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পথ অনুসরণ করি এবং রাতের এই সময়কে ইবাদতের জন্য কাজে লাগাই, তবে তা আমাদের জীবনে আধ্যাত্মিক ও পার্থিব বরকত বয়ে আনবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url