স্বামীর উপর স্ত্রীর হক কয়টি

সুপ্রিয় পাঠক, আসসালামু আলাইকুম। স্বামীর উপর স্ত্রীর হক কয়টি অনেক মা বোনেরাই তা জানেন না।আর না জানার কারণে অনেক মহিলারাই তাদের স্বামীর হক সঠিকভাবে আদায় করতে পারেন না।আজকের আর্টিকেলের মূল আলোচ্য বিষয় স্বামীর উপর স্ত্রীর হক কয়টি সে সম্পর্কে। 
স্বামীর উপর স্ত্রীর হক কয়টি
তাহলে চলুন। এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন স্বামীর উপর স্ত্রীর হক কয়টি। বিস্তারিতভাবে জানতে আর্টিকেলটির সাথেই থাকুন।

স্বামীর উপর স্ত্রীর হক কয়টি

পবিত্র কোরআনেও স্বামীর উপর স্ত্রীর হক সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে রয়েছে। ইসলামে স্বামীর উপর স্ত্রীর হক বা অধিকার রয়েছে বেশ কয়েকটি । এগুলো স্ত্রীকে সম্মানিত ও সুরক্ষিত রাখার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বামীর উপর স্ত্রীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হক নিচে উল্লেখ করা হলো:

1. মহর প্রদান: বিবাহের সময় নির্ধারিত মহর স্ত্রীকে প্রদান করা স্বামীর জন্য ফরজ। স্ত্রীকে মোহর প্রদান করার ব্যাপারে ইসলামে কঠোরভাবে বিধান রয়েছে।

2. নফকা বা ভরণ-পোষণ: স্ত্রী ও পরিবারের প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করা স্বামীর দায়িত্ব। 

3. সতর্ক আচরণ: স্ত্রীর প্রতি সদয়, ন্যায়সঙ্গত এবং সম্মানজনক আচরণ করা স্বামীর কর্তব্য। সংসার জীবনের স্ত্রীর সাথে সর্বদা বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করতে হবে।

4. ধৈর্য ও সহনশীলতা: স্ত্রীর প্রতি ধৈর্যশীল থাকা এবং তার অনুভূতিকে সম্মান করা উচিত। স্ত্রীর কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং ধৈর্য ধরে স্ত্রীর কথাগুলো শোনার অভ্যাস গড়া

5. ইসলামী শিক্ষা প্রদান: স্ত্রীকে ইসলামি শিক্ষা শেখানো এবং তার ধর্মীয় জীবনের প্রতি যত্নবান হওয়া স্বামীর দায়িত্ব।

6. বিশ্বাস ও নিরাপত্তা প্রদান: স্ত্রীর নিরাপত্তা এবং তার অধিকার রক্ষা করা স্বামীর গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। স্ত্রীর নিরাপত্তায় যেন কোন প্রকার ত্রুটি না থাকে সেদিকে বিশেষভাবে সজাগ থাকা।

7. সমানাধিকার বজায় রাখা (যদি একাধিক স্ত্রী থাকে): যদি কোনো পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকে, তবে তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করা ফরজ।

এগুলো ছাড়াও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পারস্পরিক ভালোবাসা, সম্মান, এবং সহানুভূতির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই সম্পর্ককে সুরক্ষিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য

উপরের প্রতিবেদনটি পরে ইতিমধ্যেই আমরা জানলাম স্বামীর উপর স্ত্রীর হক কয়টি। এখন এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করতে চলেছি স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য সম্পর্কে। ইসলামে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অধিকার যেমন আছে, তেমনই স্বামীর প্রতিও স্ত্রীর কিছু কর্তব্য নির্ধারিত আছে। 

এগুলো পারস্পরিক সম্পর্ক মজবুত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা দাম্পত্য জীবনে শান্তি ও সুখ বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিচে স্ত্রীর প্রধান কর্তব্যগুলো উল্লেখ করা হলো

১. স্বামীর প্রতি আনুগত্য: ইসলামি সীমার মধ্যে স্বামীর কথার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং তার নির্দেশ পালন করা স্ত্রীর প্রধান দায়িত্ব। ইসলামি সীমার মধ্যে স্বামীর বৈধ আদেশ মান্য করা। তবে যদি স্বামী ইসলাম-বিরোধী কোনো কিছু করতে বলেন, তা মান্য করা বাধ্যতামূলক নয়।

২. সতীত্ব ও ইজ্জত রক্ষা: নিজের সতীত্ব এবং পরিবারের সম্মান রক্ষা করা স্ত্রীর কর্তব্য। স্বামীর সম্মান ও গোপনীয়তা বজায় রাখা উচিত।  স্বামীর অনুমতি ছাড়া এমন কোনো কাজ না করা, যা তার অমর্যাদা সৃষ্টি করে।

৩. সংসারের দায়িত্ব পালন: সংসার পরিচালনা, গৃহস্থালীর কাজ এবং সন্তানের দেখাশোনা করা স্ত্রীর অন্যতম কাজ। এটি পারিবারিক সুখ ও শান্তি বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের শান্তি বজায় রাখার জন্য উদ্যোগী হওয়া।

৪. স্বামীর অধিকার পূরণ: স্বামীর যৌন চাহিদা বৈধভাবে পূরণ করা স্ত্রীর কর্তব্য, যদি শারীরিক বা অন্য কোনো বৈধ বাধা না থাকে।  রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যখন কোনো পুরুষ তার স্ত্রীর কাছে যায়, তখন সে যেন অযথা অস্বীকৃতি না জানায়।"

৫. স্বামীর সম্পদের সঠিক ব্যবহার: স্বামীর সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করা এবং স্বামীর সম্পদ বা উপার্জন তার অনুমতি ছাড়া অপচয় না করা এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত। স্বামীর ব্যক্তিগত বিষয় ও গোপনীয়তা রক্ষা করা।

৬. স্বামীর প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা: স্বামীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা এবং তার প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রদর্শন করা গুরুত্বপূর্ণ। অপমানজনক বা কষ্টদায়ক আচরণ থেকে বিরত থাকা উচিত।

৭. স্বামীর পরিবার ও অতিথিদের সম্মান করা: স্বামীর পরিবারকে সম্মান করা এবং তাদের সাথে সদয় ব্যবহার করা উচিত।

৮. ধৈর্য ও সহমর্মিতা: স্বামীর জীবনে কোনো কঠিন সময় এলে ধৈর্যশীল থাকা এবং তাকে মানসিক সমর্থন প্রদান করা স্ত্রীর কর্তব্য। স্বামীর সাথে জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ধৈর্যশীল থাকা। সমস্যা সমাধানে ধৈর্যের পরিচয় দেওয়া এবং সহযোগিতা করা।

৯. ধর্মীয় চর্চায় সহযোগিতা: স্বামীকে আল্লাহর পথে চলতে উৎসাহিত করা এবং নিজের ধর্মীয় দায়িত্বগুলো পালন করা।

১০.৮. স্বামীর জন্য দোয়া করা: স্বামীর জন্য আল্লাহর কাছে কল্যাণ, রিজিকের বরকত এবং সৎপথে চলার দোয়া করা।

স্ত্রী যদি এসব কর্তব্য আন্তরিকভাবে পালন করে, তবে তা দাম্পত্য জীবনকে সুখী ও বরকতময় করে তোলে। পাশাপাশি স্বামীরও উচিত স্ত্রীর প্রতি সদাচরণ এবং তার অধিকার রক্ষা করা। এগুলো ছাড়াও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পারস্পরিক ভালোবাসা, সম্মান এবং সহযোগিতার মাধ্যমে সুন্দর হয়ে ওঠে। আল্লাহ উভয়কে এই সম্পর্কের মাধ্যমে সুখী ও সমৃদ্ধ রাখার দোয়া করেছেন।

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর সুন্নত সমূহ

স্বামীর উপর স্ত্রীর হক কয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জানার পাশাপাশি আমাদের জানতে হবে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর সুন্দর সমূহ। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর সুন্নতসমূহ ইসলামের শিক্ষা ও রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আদর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়েছে। এগুলো পালন করলে দাম্পত্য জীবন সুখী ও বরকতময় হয়। স্ত্রীর জন্য স্বামীর প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হলো:

১. স্বামীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন: স্বামীর কথা ও কাজে শ্রদ্ধাশীল থাকা। তার সম্মান বজায় রাখা এবং কোনো অবস্থায় তাকে অবজ্ঞা না করা।

২. স্বামীর ইচ্ছার প্রতি যত্নবান হওয়া: স্বামীর বৈধ চাহিদাগুলো পূরণ করা এবং তার পছন্দের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। তার অনুমতি ছাড়া এমন কোনো কাজ না করা, যা সে অপছন্দ করে।

৩. সৌন্দর্য ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: নিজের পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যের প্রতি যত্নবান থাকা এবং স্বামীর সামনে আকর্ষণীয় ও পরিপাটি থাকা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, স্ত্রী যেন তার স্বামীর জন্য নিজেকে সুন্দর করে তোলে।

৪. স্বামীর ভরণপোষণ ও ঘরের দায়িত্বে সাহায্য করা: সংসারের কাজকর্মে যত্নবান হওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীগণ ঘরের কাজ নিজেরা করতেন এবং স্বামীকে সহযোগিতা করতেন।

৫. স্বামীর বৈধ আদেশ মেনে চলা: ইসলামি সীমার মধ্যে স্বামীর নির্দেশ মেনে চলা। কোনো কাজে বা অবস্থায় তার অনুমতি নেওয়া, বিশেষত বাড়ির বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে।

৬. মিষ্টি ভাষায় কথা বলা: স্বামীর সাথে সদাচরণ এবং সুন্দর ভাষায় কথা বলা। কঠোর বা অপমানজনক কথা এড়ানো।

৭. স্বামীর জন্য দোয়া করা: স্বামীর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা, যেন তিনি সৎপথে চলতে পারেন এবং জীবনে সফল হন।

৮. স্বামীর সম্পদ ও গোপনীয়তা রক্ষা করা: স্বামীর অর্থ, সম্পদ এবং ব্যক্তিগত বিষয়ের গোপনীয়তা বজায় রাখা। অপ্রয়োজনীয় অপচয় থেকে বিরত থাকা।

৯. ধৈর্যশীল ও সহনশীল থাকা: স্বামীর কোনো অসুবিধা বা ত্রুটি থাকলে ধৈর্য ধারণ করা এবং সমাধানের চেষ্টা করা।

১০. ধর্মীয় কাজে উৎসাহিত করা: স্বামীকে সালাত আদায়, রোজা রাখা এবং আল্লাহর পথে চলতে উৎসাহিত করা। নিজে ইসলামি আদর্শ মেনে চলা এবং স্বামীকে সহযোগিতা করা।

এই সুন্নতসমূহ অনুসরণ করে স্ত্রী স্বামীর প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে উঠতে পারেন এবং পারিবারিক জীবনকে সুখী ও বরকতময় করতে পারেন।

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য উক্তি

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য নিয়ে কুরআন এবং হাদিসে বিভিন্ন উক্তি উল্লেখিত হয়েছে। এগুলো দাম্পত্য জীবনের গুরুত্ব এবং স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তি পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করে। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য উক্তি তুলে ধরা হলো:

কুরআন থেকে: আল্লাহ তা'আলা বলেন: “পুনরায় যদি তারা (স্ত্রীরা) আনুগত্য করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বোচ্চ ও মহান।” — (সুরা আন-নিসা: ৩৪)

আরও বলা হয়েছে: “আর তাদের সাথে সদাচরণ কর। যদি তাদের প্রতি তোমাদের মন বিষণ্ন হয়, তবে হতে পারে, তোমরা কোনো একটি বিষয় অপছন্দ করছ অথচ আল্লাহ তাতে বিপুল কল্যাণ রেখেছেন।” — (সুরা আন-নিসা: ১৯)

হাদিস থেকে: রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “যদি আমি কারও জন্য অন্য কারও প্রতি সেজদা করার আদেশ দিতাম, তবে স্ত্রীকে স্বামীর প্রতি সেজদা করার আদেশ দিতাম।” — (তিরমিজি, হাদিস: ১১৫৯)

তিনি আরও বলেছেন: “যে স্ত্রী পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমজানের রোজা রাখে, নিজের সতীত্ব রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, তাকে বলা হবে, জান্নাতে যেকোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করো।” — (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৮৫৩)

অন্যত্র বলা হয়েছে: “নারী যদি তার স্বামীর অমতে তার বাড়ি থেকে বের হয়, তবে ফেরেশতারা তাকে অভিশাপ দিতে থাকে যতক্ষণ না সে ফিরে আসে।” — (মুসলিম, হাদিস: ২০০৪)

এই উক্তিগুলো স্পষ্ট করে যে, স্ত্রীর কর্তব্য হলো স্বামীর প্রতি আনুগত্য, তার সঙ্গে সদাচরণ এবং দাম্পত্য সম্পর্ককে সুখী ও শান্তিময় রাখা। তবে সব কিছুই ইসলামি সীমার মধ্যে হতে হবে, যেখানে স্বামীর কর্তব্যও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য। স্বামীর উপর স্ত্রীর হক কয়টি

আশা করি উপরের আলোচনা গুলো পড়ে আপনাদের ভালো লেগেছে। এবং আপনি বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন স্বামীর উপর স্ত্রীর হক কয়টি। আপনি চাইলে এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আরোও নতুন নতুন ইসলামিক পোস্ট পেতে এ ওয়েবসাইটিতে ফলো দিয়ে রাখুন। এতক্ষণ এই পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url