সূরা কাওসার বাংলা উচ্চারণসহ অরবি অর্থ, শিক্ষা, ফজিলত ও শানে নযুল
সূরা কাওসার বাংলা উচ্চারণসহ অরবি অর্থ, শিক্ষা, ফজিলত ও শানে নযুল আলোচনা করা হয়েছে আজকের এই পোস্টটিতে। সূরা কাওসার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটির সাথেই থাকুন।
তাহলে চলুন, কথা না বাড়িয়ে এবং আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট না করে আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার মাধ্যমে জেনে নিন সূরা কাওসার বাংলা উচ্চারণসহ অরবি অর্থ, শিক্ষা, ফজিলত ও শানে নযুল।
সূরা কাওসার বাংলা উচ্চারণ সহ অরবি অর্থ
সূরা কাওসার (সুরা আল-কাওসার) কোরআনের ১০৮ তম সূরা, যা 3 আয়াত বিশিষ্ট। এর বাংলা উচ্চারণ এবং আরবি অর্থ নিম্নরূপ:
সূরা কাওসার (Surah Al-Kawthar):
বাংলা উচ্চারণ: بِسْمِ اللَّٰهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ بَسْমِ اللّٰهِ রাহমানির রাহিম
আয়াত ১: إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ
বাংলা উচ্চারণ: ইন্না আ'তাইনাকাল কাওসার। অর্থ: নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে কাওসার দিয়েছি।
আয়াত ২: فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
বাংলা উচ্চারণ: ফাসল্লি লিরাব্বিক ওয়ানহর। অর্থ: সুতরাং তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ো এবং কোরবানি করো।
আয়াত ৩: إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ
বাংলা উচ্চারণ: ইন্না শানী'কা হুয়াল আবতার। অর্থ: নিশ্চয় তোমার শত্রু (যে তোমাকে ঘৃণা করে) সে হল সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন।
এই সূরা মুসলমানদের জন্য একটি বিশেষ বার্তা দেয়, যা আল্লাহর মহিমা ও তাঁর বিশেষ দান এবং অনুগ্রহের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার আহ্বান করে।
সূরা কাওসার এর শিক্ষা
সূরা কাওসার (সুরা আল-কাওসার) থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাওয়া যায়। এই সূরাটি একটি ছোট, কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী সূরা, যা আল্লাহর অনুগ্রহ এবং তাঁর প্রতি স্রেফ কর্তব্য পালন করার গুরুত্ব তুলে ধরে। এর শিক্ষাগুলি নিম্নরূপ:
আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ: "ইন্না আ'তাইনাকাল কাওসার" (আয়াত ১)। "নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে কাওসার দিয়েছি"। এখানে কাওসার শব্দটির অর্থ হলো মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ বা দান, যা অনেক কিছুতে হতে পারে—আধ্যাত্মিক বা দুনিয়াবী।
এটি আল্লাহর মহান দানের প্রতি আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। এটি আমাদের বুঝায় যে, আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের বিশেষ দান দেন, যা তাঁদের জীবনকে পূর্ণতা দেয়।
ইবাদত ও কোরবানির গুরুত্ব: "ফাসল্লি লিরাব্বিক ওয়ানহর" (আয়াত ২) - "তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ো এবং কোরবানি করো।"
এই আয়াতটি ইবাদতের গুরুত্ব এবং বিশেষত আল্লাহর উদ্দেশ্যে নামাজ ও কোরবানি করার তাগিদ দেয়। আমাদের জীবনে ইবাদত ও কোরবানি আল্লাহর নিকট সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শত্রুদের পরাজয়: "ইন্না শানী'কা হুয়াল আবতার" (আয়াত ৩)। "নিশ্চয় তোমার শত্রু (যে তোমাকে ঘৃণা করে) সে হল সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন।"
এই আয়াতটি সেই সমস্ত শত্রুদের সম্পর্কে বলছে যারা রাসূল (সাঃ) বা তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল বা তাদের ক্ষতি করতে চেয়েছিল। আল্লাহ এখানে জানান যে, তারা পরাজিত হবে এবং তাদের কোন সফলতা হবে না।
ধৈর্য ও বিশ্বাসের শিক্ষা: এই সূরা আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও দয়া লাভের জন্য আমাদের ইবাদত ও ধৈর্য থাকতে হবে। জীবনের কঠিন মুহূর্তে আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে, তাঁর আদেশ অনুসরণ করা উচিত।
দুনিয়া ও আখিরাতের প্রতি দৃষ্টি: সূরা কাওসার আধ্যাত্মিক প্রেরণা দেয় এবং আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আল্লাহর দান শুধুমাত্র দুনিয়াতে নয়, বরং আখিরাতেও বিশাল পরিমাণে হতে পারে। আমাদের দুনিয়ার কাজ এবং আখিরাতের সাফল্য একে অপরের সাথে যুক্ত।
এই সূরা আল্লাহর বিশেষ দানের প্রতি কৃতজ্ঞতা, তাঁর প্রতি আনুগত্য এবং শত্রুদের প্রতি নিশ্চিত পরাজয়ের বার্তা দেয়, যা মুসলমানদের জীবনে প্রেরণা ও শক্তি প্রদান করে।
সূরা কাওসার ব্যাখ্যা
সূরা কাওসার (আল-কাওসার) কোরআনের ১০৮ তম সূরা, এবং এটি ৩টি আয়াত নিয়ে গঠিত। এই সূরাটি একটি সংক্ষিপ্ত, কিন্তু গভীর অর্থপূর্ণ সূরা।
যা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ এবং বান্দার কর্তব্যের গুরুত্ব সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেয়। নিচে সূরা কাওসারের ব্যাখ্যা প্রদান করা হলো:
আয়াত ১: إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ
বাংলা উচ্চারণ: ইন্না আ'তাইনাকাল কাওসার।
অর্থ: "নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে কাওসার দিয়েছি।"
ব্যাখ্যা: এই আয়াতটি আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল (সাঃ)-কে একটি বিশেষ দান বা অনুগ্রহ দেওয়া সম্পর্কে জানাচ্ছে। "কাওসার" শব্দটি অত্যন্ত ব্যাপক অর্থ ধারণ করে, এবং এর বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে:
কাওসার হতে পারে একটি নদী যা জান্নাতে রয়েছে এবং এটি রাসূল (সাঃ)-এর জন্য বিশেষভাবে তৈরি হয়েছে। এই নদীটি এমন একটি নদী যা আল্লাহ নিজে রাসূল (সাঃ)-কে উপহার হিসেবে দিয়েছেন, এবং এটি জান্নাতের অমূল্য ধন।
কিছু আলেম কাওসারকে আল্লাহর বিশেষ রহমত এবং দানের প্রতীক হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, যা রাসূল (সাঃ)-এর উপর আসবে—তার মাধ্যমে ইসলাম সফল হবে এবং তার উম্মতকে সাফল্য ও দয়া প্রদান করা হবে।
আরেকটি ব্যাখ্যায় কাওসার হল কোরআন, যা আল্লাহ রাসূল (সাঃ)-কে দিয়েছেন, যেটি মুসলিম জাতির জন্য পথপ্রদর্শক।
আয়াত ২: فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
বাংলা উচ্চারণ: ফাসল্লি লিরাব্বিক ওয়ানহর।
অর্থ: "তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ো এবং কোরবানি করো।"
ব্যাখ্যা: এই আয়াতটি আল্লাহর জন্য নামাজ এবং কোরবানি করার নির্দেশনা প্রদান করছে। এখানে "ফাসল্লি" (নামাজ পড়ো) এবং "ওয়ানহর" (কোরবানি করো) দুটি প্রধান ইবাদতের প্রতি আহ্বান করা হচ্ছে।
এই দুইটি কাজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করে।
নামাজ: এটা মুসলিমদের জন্য একমাত্র ইবাদত যা প্রতিদিন পাঁচবার করতে হয়, এবং এটি আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে।
কোরবানি: এটি ইসলামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা পশু কোরবানি করার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং তাঁর দানে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। কোরবানির সময় আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা এবং অনুগত্য প্রদর্শন করা হয়।
আয়াত ৩: إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ
বাংলা উচ্চারণ: ইন্না শানী'কা হুয়াল আবতার।
অর্থ: "নিশ্চয় তোমার শত্রু (যে তোমাকে ঘৃণা করে) সে হল সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন।"
ব্যাখ্যা: এই আয়াতটি রাসূল (সাঃ)-এর শত্রুদের সম্পর্কে কথা বলছে, যারা তার বিরুদ্ধে ছিল। "শানী'কা" (শত্রু) হচ্ছে সেই ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যারা রাসূল (সাঃ)-কে ঘৃণা করত এবং তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল।
এই আয়াতে বলা হয়েছে, তাদের পরিণতি হবে "আবতার" (বিচ্ছিন্ন বা মুছে যাওয়া)। অর্থাৎ, যারা ইসলামের বিরোধিতা করে, তারা শেষ পর্যন্ত পরাজিত হবে এবং তাদের কোন স্থায়ী প্রভাব থাকবে না।
আবতার শব্দটি এখানে ব্যবহৃত হয়েছে তাদের চিরকালীন পরাজয়ের প্রতীক হিসেবে। এর মাধ্যমে আল্লাহ সতর্ক করেছেন যে, ইসলাম এবং রাসূল (সাঃ)-এর পথে যারা বাঁধা সৃষ্টি করবে তারা শাস্তি পাবে এবং তাদের নাম ইতিহাস থেকে মুছে যাবে।
সার্বিক ব্যাখ্যা: সূরা কাওসার আল্লাহর বিশেষ দান এবং তাঁর প্রতি আনুগত্যের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করে। প্রথমে আল্লাহ রাসূল (সাঃ)-কে তাঁর বিশেষ দান (কাওসার) দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
তারপর উম্মতকে আল্লাহর প্রতি ইবাদত (নামাজ) ও কোরবানি করার নির্দেশ দেন। অবশেষে, শত্রুদের প্রতি আল্লাহ তাদের পরাজয় ও মুছে যাওয়ার কথা জানিয়ে দেন।
এই সূরা মুসলিমদের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা, যেখানে আল্লাহর অনুগ্রহ, ইবাদত, এবং শত্রুদের পরাজয়ের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
এটি মুসলমানদের জন্য আত্মবিশ্বাস এবং প্রেরণা প্রদান করে, তাদের নিজেদের জীবনে আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের গুরুত্ব বুঝাতে সহায়ক।
সূরা কাওসার এর ফজিলত
সূরা কাওসারের (সুরা আল-কাওসার) অনেক ফজিলত বা মহিমা রয়েছে, যা কোরআনে উল্লেখিত এবং হাদীসে বর্ণিত। এই সূরাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মুসলমানদের জন্য বিশেষ বরকত ও অনুগ্রহের প্রতীক।
নিচে সূরা কাওসারের কিছু বিশেষ ফজিলত আলোচনা করা হলো:
১. কাওসার নদীর কথা: সূরা কাওসারের প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে "ইন্না আ'তাইনাকাল কাওসার" (আমরা তোমাকে কাওসার দিয়েছি)। কাওসার একটি বিশেষ নদী,
যা জান্নাতে রয়েছে এবং রাসূল (সাঃ)-এর জন্য আল্লাহ প্রদান করেছেন। এটি এমন একটি নদী যার পানি অত্যন্ত সুমিষ্ট এবং পিপাসুদের জন্য এক অনন্য দান।
হাদীসে বর্ণনা: রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "কাওসার হল একটি নদী যা জান্নাতে রয়েছে, আল্লাহ তা আমাকে উপহার দিয়েছেন। এর পানি সোনার মতো সুমিষ্ট এবং এর তীরে রয়েছে মসলিনের থালা।" (সহীহ মুসলিম)
২. মনের শান্তি ও আধ্যাত্মিক ফজিলত: সূরা কাওসার একদিকে আল্লাহর মহিমা এবং অন্যদিকে রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি আল্লাহর বিশেষ দানকে প্রকাশ করে।
এটি মনের শান্তি এবং আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক। যারা এটি নিয়মিত পাঠ করে, তারা আল্লাহর কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে এবং তাদের জীবনে সুখ-শান্তি ফিরে আসে।
হাদীসে বর্ণনা: রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি সূরা কাওসার পড়বে, সে দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হবে।" (তাবরানি)
৩. নামাজে ও দোআতে বরকত: সূরা কাওসারের এক বিশেষ ফজিলত হল যে, এটি নামাজে ও দোআতে বরকত আনে। যারা এ সূরা নিয়মিত নামাজে পড়ে।
তাদের জীবনে আল্লাহর রহমত ও দয়া বৃদ্ধি পায় এবং তাদের জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতে সাহায্য পাওয়া যায়। বিশেষত, ফজরের নামাজের পর যদি সূরা কাওসার পাঠ করা হয়, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে একাধিক অনুগ্রহ এবং সাহায্য প্রাপ্তির আশা করা যায়।
৪. শত্রুদের বিরুদ্ধে জয় লাভ: সূরা কাওসারের শেষ আয়াতে আল্লাহ শত্রুদের পরাজয় ঘোষণা করেছেন। "ইন্না শানী'কা হুয়াল আবতার" (তোমার শত্রু হল সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন)।
যারা ইসলাম এবং রাসূল (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে, তারা পরাজিত হবে এবং তাদের অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে মুছে যাবে। এই সূরা মুসলিমদের জন্য এক ধরনের আশ্বাস, যে তাদের শত্রুরা কোনোদিন সফল হবে না।
৫. আল্লাহর প্রতি আনুগত্য বৃদ্ধি: সূরা কাওসার আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর প্রতি আনুগত্য ও ইবাদত করতে হবে। নামাজ ও কোরবানি করা আল্লাহর প্রতি আমাদের ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার নিদর্শন।
এই সূরা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আল্লাহ আমাদের সবকিছুর উৎস এবং তার প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রাখা উচিত।
৬. দোআতে বিশেষ ফজিলত: যারা নিয়মিত সূরা কাওসার পাঠ করে, তারা দোআতে বিশেষ ফজিলত লাভ করে। এক হাদীসে বলা হয়েছে, "যে ব্যক্তি সূরা কাওসার পড়বে, তার দোআ গ্রহণযোগ্য হবে এবং আল্লাহ তার বিপদ ও সমস্যা দূর করবেন।" (ইবনে মাজাহ)
৭. জান্নাতে প্রবেশের দ্বার: কাওসার নদী জান্নাতের একটি অংশ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। যে ব্যক্তি সূরা কাওসার নিয়মিত পড়বে, তাকে জান্নাতে প্রবেশের জন্য সহজ পথ তৈরি হবে এবং সে জান্নাতে আল্লাহর বিশেষ দান লাভ করবে। এটি তার জন্য আখিরাতের সফলতার প্রতীক হবে।
সার্বিক ফজিলত:
- আলান: সূরা কাওসার মুসলমানদের জন্য আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ এবং রহমতের প্রতীক।
- ইবাদতের প্রতি উৎসাহ: নামাজ ও কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ককে গভীর করে তোলে।
- আধ্যাত্মিক উন্নতি: সূরা কাওসার পাঠের মাধ্যমে মুসলমানরা আত্মিক শান্তি ও আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য লাভ করে।
এই সূরা মুসলমানদের জন্য এক মহান শিক্ষার উৎস, যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রাপ্তি ও পূর্ণ বিশ্বাসের উপর জোর দেয়।
সূরা কাওসার এর শানে নুযুল
সূরা কাওসারের শানে নুযুল (অর্থাৎ, এই সূরার অবতীর্ণ হওয়ার কারণ) সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা রয়েছে, যা ঐতিহাসিক ঘটনার উপর ভিত্তি করে বর্ণিত হয়েছে। সূরা কাওসারের নুযুলের মূল কারণ হিসেবে কিছু বিশেষ ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়।
শানে নুযুল:
১. আবু লাহাবের অপমানজনক মন্তব্য: সূরা কাওসারের শানে নুযুলের একটি সাধারণ ব্যাখ্যা হলো, যখন রাসূল (সাঃ)-এর নবুওয়াত এবং ইসলামের প্রচার শুরু হয়, তখন কিছু ব্যক্তি মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করছিল।
এর মধ্যে এক শত্রু ছিলেন আবু লাহাব, যিনি ছিলেন রাসূল (সাঃ)-এর চাচা, কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করেননি এবং তিনি ইসলাম ও রাসূল (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে অপমানজনক মন্তব্য করতেন।
একদিন, তিনি রাসূল (সাঃ)-কে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলেছিলেন, "তোমার কোন পুত্র সন্তান নেই, তোমার বংশের সমাপ্তি হবে।"
২. রাসূল (সাঃ)-এর পুত্র আবু তালিবের মৃত্যুর পর শত্রুদের হাসি-ঠাট্টা: রাসূল (সাঃ)-এর পুত্র আবু তালিব এবং অন্যান্য সন্তানদের মৃত্যুতে তাঁর শত্রুরা হাস্যরস করেছিল এবং তারা বলেছিল যে,
রাসূল (সাঃ)-এর বংশ ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং তাঁর কোন উত্তরসূরি থাকবে না। এই ঘটনার পর, আল্লাহ তাআলা সূরা কাওসার নাযিল করেন।
যেখানে আল্লাহ রাসূল (সাঃ)-কে আশ্বস্ত করেছেন যে, তাঁর কাছে কাওসার (বিশেষ অনুগ্রহ) রয়েছে, যা তার বংশধারা এবং সন্তানদের দানে পূর্ণ হবে।
৩. কাওসার নদী এবং আল্লাহর দান: এই নুযুলের মাধ্যমে আল্লাহ রাসূল (সাঃ)-কে বিশেষ করে বলছেন যে, তাঁর বংশ কখনো ধ্বংস হবে না।
বরং আল্লাহ তাঁকে এমন একটি বিশেষ দান দিয়েছেন, যা তার বংশকে চিরকাল টিকে রাখবে। এটি কাওসার নামে পরিচিত, যা জান্নাতে একটি বিশাল নদী হিসেবে বর্ণিত হয়েছে, এবং এটি রাসূল (সাঃ)-এর জন্য আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ।
ইতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
আবু লাহাবের কথার প্রতিবাদ: মুসলিম ঐতিহাসিকরা বলেন যে, সূরা কাওসার নাযিলের সময় আবু লাহাব রাসূল (সাঃ)-কে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলেছিলেন,
"তোমার বংশ তো শেষ হয়ে গেছে, তোমার কোন উত্তরসূরি থাকবে না," যখন রাসূল (সাঃ)-এর পুত্র আবু তালিব মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এই সময়েই আল্লাহ সূরা কাওসার নাযিল করেন
এবং রাসূল (সাঃ)-কে আশ্বস্ত করেন যে তাঁর বংশ কখনো শেষ হবে না, বরং আল্লাহ তাঁকে এমন একটি অনুগ্রহ দিয়েছেন যা তাঁর বংশকে চিরকাল রক্ষা করবে।
কাওসার নদী: কাওসার একটি বিশেষ নদী যা জান্নাতে রয়েছে, এবং এটি রাসূল (সাঃ)-এর জন্য উপহার। এটি রাসূল (সাঃ)-এর বংশের দ্যুতির মতো, এবং এই নদীটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর রাসূল (সাঃ)-কে দেওয়া একটি বিশেষ দান হিসেবে বিবেচিত হয়।
মূল বার্তা: সূরা কাওসারের শানে নুযুলের মাধ্যমে আল্লাহ রাসূল (সাঃ)-এর শত্রুদের মনে এক গভীর বার্তা পাঠিয়েছেন—যে তাঁকে অপমানিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে, তাদের পরিণতি হবে পরাজয়, আর আল্লাহ তাঁর নবীর বংশকে কখনো ধ্বংস হতে দেবেন না।
বরং তিনি তাঁর রাসূল (সাঃ)-কে অশেষ দান ও অনুগ্রহে পূর্ণ করবেন। এই সূরা আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর দিকে পূর্ণ বিশ্বাস এবং তাঁর পথে আনুগত্যই জীবনের সফলতা এবং আল্লাহর বিশেষ রহমত ও দানের দিকে নিয়ে যায়।
মন্তব্য। সূরা কাওসার বাংলা উচ্চারণসহ অরবি অর্থ, শিক্ষা, ফজিলত ও শানে নযুল
পাঠক, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারী ও ধৈর্য ধরে পড়েছেন। পড়ার মাধ্যমে ইতিপূর্বে জানতে পেরেছেন সূরা কাওসার বাংলা উচ্চারণসহ অরবি অর্থ, শিক্ষা, ফজিলত ও শানে নযুল।
আপনাদের যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লেগে থাকে। তবে আপনাদের প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করুন। এই রকম আরোও গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পেতে নিয়মিত আমার www.sumonworld.com ওয়েবসাইটটি পরিদর্শন করুন।
আবারও দেখা হবে নতুন কোন এক আর্টিকেলের মাধ্যমে। আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি। ভাল থাকুন এবং প্রিয়জনদের ভালবাসুন। আল্লাহ হাফেজ
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url