বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা পড়ে নিন
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা ১৩ টি পয়েন্ট সহকারে আলোচনা করা হয়েছে আজকের এই পোস্টটিতে। বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন শ্রেণীর পরিক্ষায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে রচনা আসে তাদের জন্য আজকের এই পোস্টটি।
আশা করি এ রচনাটি সেই সকল ছাত্র-ছাত্রীদের রচনার প্রস্তুতির জন্য বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই রচনাটি উপকারে আসবে। তাহলে চলুন, কথা না বাড়িয়ে এবং আপনারা মূল্যবান সময় নষ্ট না করে আজকের এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিত ভাবে জেনে নিন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: এক বিস্ময়কর প্রতিভা
ভূমিকা
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, এক মানবিকতার দিশারি, এক বিশ্বনাগরিকের নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর নামের সাথে মিশে আছে কবিতা, গান, নাটক, প্রবন্ধ, উপন্যাস, ছোটগল্প, চিত্রকলা ও শিক্ষাদর্শনের এক অপার মহিমা।
তিনি বাংলা ভাষাকে বিশ্ব দরবারে সম্মানিত করেছেন এবং বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক পরিচয়কে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর জীবন ও সাহিত্যকীর্তি বাংলা ভাষার জন্য এক অমূল্য সম্পদ।
জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ মে (২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি ব্রাহ্মসমাজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং এক বিশিষ্ট দার্শনিক।
মাতা সারদা দেবী ছিলেন এক স্নেহময়ী নারী। ঠাকুর পরিবার ছিল শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সঙ্গীতচর্চার এক প্রাণকেন্দ্র। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথ এই পরিবারে শিল্প-সংস্কৃতির বাতাবরণে বেড়ে ওঠেন।
শিক্ষাজীবন
রবীন্দ্রনাথের প্রথাগত শিক্ষাজীবন তেমন দীর্ঘ ছিল না। তিনি কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্মাল স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে কিছুদিন পড়াশোনা করেন। স্কুলের কঠোর নিয়ম-কানুন তাঁর সৃজনশীল মনকে সীমাবদ্ধ করেছিল।
ফলে তিনি নিয়মিত বিদ্যালয় ত্যাগ করেন। এরপর তিনি বাড়িতেই পণ্ডিত ও শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শিক্ষা লাভ করেন। ১৮৭৮ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড যান, কিন্তু আইন পড়া অসমাপ্ত রেখে দেশে ফিরে আসেন।
বিদেশে থাকাকালীন তিনি পাশ্চাত্য সঙ্গীত, সাহিত্য এবং দর্শনের সাথে পরিচিত হন যা তাঁর চিন্তাজগৎকে সমৃদ্ধ করে।
সাহিত্যকীর্তি
রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য জীবন বিপুল ও বৈচিত্র্যময়। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সঙ্গীত স্রষ্টা এবং চিত্রশিল্পী। তাঁর সাহিত্যকীর্তির মধ্যে প্রেম, প্রকৃতি, মানবতা, দার্শনিকতা, দেশপ্রেম ও আধ্যাত্মিকতা সবই মিলে এক অনন্য সংমিশ্রণ।
কবিতা
রবীন্দ্রনাথের কবিতায় বাংলার প্রকৃতি, মানবপ্রেম, দর্শন, আধ্যাত্মিকতা এবং জীবনবোধের গভীর ছাপ রয়েছে। তাঁর কবিতার উল্লেখযোগ্য সংকলনগুলো হলো। গীতাঞ্জলি (নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত), সোনার তরী, বালাকা, ক্ষণিকা, চিত্রা, শেশপ্রশ্ন।
রবীন্দ্রসঙ্গীত
রবীন্দ্রনাথ প্রায় ২০০০-এরও বেশি গান রচনা করেছেন, যা রবীন্দ্রসঙ্গীত নামে পরিচিত। তাঁর গান বাংলার হৃদয়ে প্রেম, প্রকৃতি, দেশপ্রেম, আধ্যাত্মিকতা এবং মানবিকতার সুর তুলেছে। তাঁর সৃষ্ট “আমার সোনার বাংলা” বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং “জন গণ মন” ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গৃহীত হয়েছে।
উপন্যাস
রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসে তিনি সমাজ, রাজনীতি, মানবিক সম্পর্ক এবং আত্মিক জিজ্ঞাসার দিকগুলো সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো হলো। চোখের বালি, ঘরে বাইরে, গোরা, শেষের কবিতা, যোগাযোগ।
ছোটগল্প ও প্রবন্ধ
রবীন্দ্রনাথ বাংলা ছোটগল্প সাহিত্যের জনক। তাঁর ছোটগল্পগুলোতে সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ, প্রেম-ভালোবাসা, সমাজব্যবস্থা এবং মানবিক অনুভূতির গভীরতা রয়েছে। বিখ্যাত গল্পগুলো হলো কাবুলিওয়ালা, পোস্টমাস্টার, সমাপ্তি, খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন।
তাঁর প্রবন্ধগুলোতেও শিক্ষা, সাহিত্য, সমাজ, রাজনীতি, দর্শন ও মানবতাবাদী চিন্তাধারা প্রকাশ পেয়েছে।
নাটক
রবীন্দ্রনাথ বাংলা নাট্য সাহিত্যের ক্ষেত্রে নতুন ধারা এনেছেন। তাঁর নাটকগুলোতে জীবনের নানা দিক, মানবিক সংকট, আধ্যাত্মিকতা, প্রেম ও সমাজসংস্কারের প্রতিফলন রয়েছে। উল্লেখযোগ্য নাটকসমূহ: রক্তকরবী, ডাকঘর, চণ্ডালিকা, রাজা।
শান্তিনিকেতন ও শিক্ষাদর্শন
১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় নামে বিশ্বখ্যাত হয়ে ওঠে। তাঁর শিক্ষাদর্শন ছিল প্রকৃতিনির্ভর, সৃজনশীল ও মানবিক।
তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রকৃত শিক্ষা কেবল বইয়ের পৃষ্ঠায় নয়, বরং প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে, আনন্দের মাধ্যমে গ্রহণ করা উচিত। তাঁর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শান্তিনিকেতন ছিল সেই আদর্শের বাস্তব রূপ।
নোবেল পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যগ্রন্থ “Gitanjali” ইংরেজি অনুবাদে ১৯১২ সালে প্রকাশিত হয় এবং তিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি প্রথম এশীয় এবং প্রথম বাঙালি হিসেবে এই সম্মান অর্জন করেন।
তাঁর এই স্বীকৃতি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে গর্বিত করেছে। তিনি ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান ও চীনসহ বহু দেশে ভ্রমণ করেছেন এবং ভাষণ, সাহিত্য পাঠের মাধ্যমে ভারতীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রচার করেছেন।
চিত্রকলা ও অন্যান্য সৃজনশীলতা
রবীন্দ্রনাথের সৃজনশীলতা চিত্রকলার জগতেও বিস্তৃত। তিনি প্রায় ২০০০-এর বেশি চিত্রকলা এঁকেছেন, যা আধুনিক শিল্পকলার এক অনন্য দিক প্রকাশ করেছে। তাঁর চিত্রকর্মগুলোতে বিমূর্ততা, বর্ণবৈচিত্র্য ও গভীর ভাবের প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু
১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট (২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য এক যুগপুরুষকে হারিয়েছিল, কিন্তু তাঁর সাহিত্যকীর্তি, গান, নাটক ও শিক্ষা আজও বাঙালির জীবনকে আলোকিত করে রেখেছে।
উপসংহার
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন এক বহুমাত্রিক সৃষ্টিশীল প্রতিভা। তাঁর সাহিত্যকীর্তি কেবল বাংলা ভাষাকে নয়, সমগ্র বিশ্বকে সমৃদ্ধ করেছে। তিনি ছিলেন কবিতার জাদুকর, সুরের সাধক, গল্প ও উপন্যাসের কথক, নাটকের স্রষ্টা, শিক্ষার পথপ্রদর্শক এবং চিত্রকলার শিল্পী।
তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করেছেন এবং বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর জীবন, দর্শন ও সাহিত্য আজও আমাদের প্রেরণা যোগায়।
মন্তব্য
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই রচনাটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তবে আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে রচনাটি শেয়ার করুন এবং তাদেরও পড়ার সুযোগ করে দিন।
আর নতুন নতুন পোস্ট পেতে এই ওয়েবসাইটটি প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করুন। ধন্যবাদ এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে এই পোস্টটির সাথে থাকার জন্য।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url