বজ্রপাত হলে কি করতে হবে ও কি করা উচিত নয়
এখন বর্ষার মৌসুম। এই সময় টানা বৃষ্টিপাত তো লেগেই থাকে তার সাথে দমকা হওয়ার সাথে সাথে বজ্রপাত হয়। এই বজ্রপাতে আমাদের দেশে প্রতিবছর অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। তাই বজ্রপাত হলে কি করতে হবে ও কি করা উচিত নয় এ সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরী।
তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে জেনে নিন বজ্রপাত হলে কি করতে হবে ও কি করা উচিত নয় সে সম্পর্কে। চলুন, বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
বজ্রপাত কী?
বজ্রপাত হলো এক ধরনের প্রাকৃতিক বিদ্যুৎ নির্গমন, যা আকাশে মেঘের মধ্যে অথবা মেঘ ও মাটির মধ্যে ঘটে।
কীভাবে হয়?
মেঘের মধ্যে ধনাত্মক (+) এবং ঋণাত্মক (–) চার্জ জমা হয়। যখন চার্জের পার্থক্য খুব বেশি হয়ে যায়, তখন সেই শক্তি হঠাৎ করে নির্গত হয়। সেই নির্গত শক্তিকে বিদ্যুতের রেখা (lightning) বলা হয়। বিদ্যুতের এই নির্গমনের ফলে তাপ ও আলো তৈরি হয় এবং শব্দ (বজ্রধ্বনি) হয়।
কখন হয়?
সাধারণত গ্রীষ্মকালে অথবা বৃষ্টির সময় ঘন মেঘের মধ্যে বজ্রপাত বেশি হয়।
বজ্রপাতের দোয়া আরবি ও বাংলা
বজ্রপাতের সময় যে দোয়া পড়া হয়, তা হলো:
আরবি দোয়া: سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ
বাংলা উচ্চারণ: সুবহানাল্লাযি ইউসাব্বিহুর-রাআ’দু বিহামদিহি ওয়াল-মালাঈকাতু মিন খীফাতিহি
বাংলা অর্থ: "পবিত্র সেই সত্তা, যাঁর প্রশংসায় বজ্রকণ্ঠ গর্জন করে, আর তাঁর ভয়ে ফেরেশতাগণ (তাসবীহ পাঠ করে)।"
এই দোয়া বজ্রপাতের সময় পড়া উচিত। এটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
বজ্রপাত হলে কি করতে হবে?
বজ্রপাত (বজ্রঘাত) এক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা থেকে নিরাপদ থাকতে হলে কিছু করণীয় রয়েছে।সেই করণীয়গুলো বজ্রপাতের সময় অবশ্যই মেনে চলা উচিত। বজ্রপাত হলে সেই করণীয় গুলো হল:
- বাড়ির ভেতরে থাকুন: যদি বাইরে থাকেন, দ্রুত কোনো নিরাপদ জায়গা (যেমন পাকা দালান) বা গাড়ির ভিতরে চলে যান। ,গাছের নিচে বা খোলা মাঠে দাঁড়ানো বিপজ্জনক।
- বৈদ্যুতিক জিনিস থেকে দূরে থাকুন: টেলিভিশন, কম্পিউটার, ফোন চার্জার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন।বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার না করাই ভালো।
- উচ্চ স্থান এড়িয়ে চলুন: পাহাড়, উঁচু টিলা, বা কোনো উঁচু জায়গায় দাঁড়াবেন না।
- খোলা জায়গায় থাকলে: কোনো গাড়ি বা পাকা স্থাপনার মধ্যে আশ্রয় নিন। মাটিতে বসে থাকুন, পা একসাথে রাখুন এবং মাথা নিচু রাখুন, কিন্তু শুয়ে পড়বেন না।
- বজ্রপাতের দোয়া পড়ুন: سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ
- (বাংলা উচ্চারণ: সুবহানাল্লাযি ইউসাব্বিহুর-রাআ’দু বিহামদিহি ওয়াল-মালাঈকাতু মিন খীফাতিহি)
বৃষ্টি বা বজ্রপাতের সময় বাহিরে খেলাধুলা করা বন্ধ করুন। লোহার বা বিদ্যুত পরিবাহী বস্তু থেকে দূরে থাকুন। এবং যতটা সম্ভব বজ্রপাতের সময় সাবধানে থাকুন।
বজ্রপাতের সময় কি করা উচিত নয়?
বজ্রপাতের সময় কিছু জিনিস একেবারেই করা উচিত নয়। কারণ এগুলো বজ্রপাতের আঘতের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক বজ্রপাতের সময় কি করা উচিত নয়:
- গাছের নিচে দাঁড়ানো: গাছ সহজেই বজ্রপাতের শিকার হতে পারে।
- খোলা মাঠ বা উঁচু স্থানে দাঁড়ানো: এ ধরনের স্থানে বজ্রপাত সহজেই আঘাত হানতে পারে।
- লম্বা ধাতব জিনিস হাতে ধরা (যেমন ছাতা, গলফ ক্লাব): ধাতব বস্তু বজ্রপাতকে আকর্ষণ করে।
- বিদ্যুত সংযোগ বা বৈদ্যুতিক যন্ত্র স্পর্শ করা: টেলিভিশন, কম্পিউটার, চার্জার ব্যবহার করা বিপজ্জনক।
- মোবাইল ফোন চার্জে ব্যবহার করা: চার্জিং অবস্থায় ফোন ব্যবহার করা বিপদজনক।
- পুকুর, নদী, বা অন্য পানির মধ্যে থাকা: পানি বিদ্যুৎ পরিবাহক।
- ছাদে বা বারান্দায় দাঁড়ানো: খোলা জায়গায় থাকা বিপজ্জনক।
- মোটরসাইকেল, সাইকেল বা খোলা যানবাহনে চড়া: এগুলো বজ্রপাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
বজ্রপাতের সময় বাড়ির ভিতরে নিরাপদ স্থানে থাকতে হবে, দোয়া পড়তে হবে, এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বন্ধ করে রাখতে হবে।
বজ্রপাত কেন হয় ইসলাম কি বলে?
ইসলাম ধর্মে বজ্রপাত সম্পর্কে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী, বজ্রপাত আল্লাহ্র কুদরতের (ক্ষমতা) একটি নিদর্শন। বজ্রপাত কেন হয় – ইসলামের দৃষ্টিতে:
কুরআনে আল্লাহ বলেন: وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ
“বজ্র আল্লাহর প্রশংসায় তাঁর মহিমা বর্ণনা করে এবং তাঁর ভয়ে ফেরেশতাগণও (তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে)।” (সূরা রা’দ – ১৩:১৩)। অর্থাৎ, বজ্রপাত আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শন এবং আকাশে বিদ্যুৎ ও বজ্রের আওয়াজ দ্বারা তাঁর মহিমা ঘোষণা করা হয়।
হাদীস অনুযায়ী, বজ্রপাতের সময় ফেরেশতা বজ্রের আওয়াজ তোলে এবং এটি আল্লাহর আদেশ পালন করার অংশ। কুরআন-হাদীস থেকে বোঝা যায়, বজ্রপাতের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর কুদরতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় এবং সতর্ক করা হয়।
বিজ্ঞান বলছে, বজ্রপাত বৈদ্যুতিক চার্জের কারণে হয়, কিন্তু ইসলাম জানায়, এ বিদ্যুৎও আল্লাহর ইচ্ছায় সৃষ্টি।
মূল শিক্ষা: বজ্রপাত কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়, বরং এটি আল্লাহর সৃষ্টি, যা তাঁর মহিমা ও শক্তির পরিচয় বহন করে। তাই বজ্রপাতের সময় আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি এবং তাঁর প্রশংসা করি।
বজ্রপাতের কারণ ও প্রতিকার
বজ্রপাত থেকে বাঁচতে আমাদের অবশ্যই বজ্রপাতের কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। বজ্রপাতের কারণ ও প্রতিকার জানা থাকলে বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচা অন্য একটা সম্ভব। এ প্রতিবেদনটির মাধ্যমে আলোচনা করা হয়েছে বজ্রপাতের কারণ ও প্রতিকার।
বজ্রপাতের কারণ
১। বিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক দিক থেকে:
কুরআনে বলা হয়েছে, বজ্রপাত আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন: “বজ্র আল্লাহর প্রশংসায় তাঁর মহিমা ঘোষণা করে এবং ফেরেশতাগণ আল্লাহর ভয়ে তাসবীহ পাঠ করে।” (সূরা রা’দ – ১৩:১৩)। অর্থাৎ, এটি আল্লাহর শক্তি ও ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ।
- বজ্রপাত হয় মূলত আকাশে বিদ্যুতের চার্জের (আবেগ) কারণে।
- মেঘের মধ্যে এবং মেঘ ও মাটির মধ্যে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জের বিনিময় ঘটে।
- যখন এই চার্জের পার্থক্য খুব বেশি হয়ে যায়, তখন তা হঠাৎ করে সমীকরণ করতে চায় – আর তখনই বিদ্যুতের রেখা সৃষ্টি হয় (এটিই বজ্রপাত)।
- বজ্রপাতের সময় তাপমাত্রা হাজার হাজার ডিগ্রীতে পৌঁছায়, যা থেকে বায়ু সম্প্রসারণ হয় এবং প্রচণ্ড শব্দ (বজ্রধ্বনি) সৃষ্টি হয়।
কুরআনে বলা হয়েছে, বজ্রপাত আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন: “বজ্র আল্লাহর প্রশংসায় তাঁর মহিমা ঘোষণা করে এবং ফেরেশতাগণ আল্লাহর ভয়ে তাসবীহ পাঠ করে।” (সূরা রা’দ – ১৩:১৩)। অর্থাৎ, এটি আল্লাহর শক্তি ও ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ।
বজ্রপাতের প্রতিকার: বাড়ির ভিতরে থাকা, গাছ, খোলা মাঠ, এবং ধাতব জিনিস এড়ানো, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার না করা, আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
বজ্রপাতের উপকারিতা
বজ্রপাতকে আমরা অনেক সময় বিপজ্জনক মনে করি (এবং সত্যিই এটি সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়), তবে প্রকৃতিতে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতাও রয়েছে। চলুন তাহলে বজ্রপাতের উপকারিতা জেনে নেয়া যাক।
১। বাতাসে নাইট্রোজেনের যোগান বৃদ্ধি করে: বজ্রপাতের সময় আকাশে বিদ্যুতের শক্তি নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেনের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়। এর ফলে নাইট্রোজেন অক্সাইড গঠিত হয়, যা বৃষ্টির মাধ্যমে মাটিতে মিশে গাছের জন্য প্রাকৃতিক সার (নাইট্রেট) হিসেবে কাজ করে। এটি ফসল ও উদ্ভিদের জন্য খুবই উপকারী।
২। বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি করে: বজ্রপাতের সময় আকাশে বাষ্প জমাট বাঁধে, যা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বাড়ায়। বৃষ্টি কৃষির জন্য এবং পানির উৎস পূরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৩। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে: বজ্রপাতের মাধ্যমে আকাশ ও মাটির মধ্যে চার্জের ভারসাম্য রক্ষা হয়, যা প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৪। জীববৈচিত্র্যের জন্য সহায়ক: গাছপালা ও শস্যের বৃদ্ধির মাধ্যমে এটি জীববৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করে।
৫। মানুষকে সতর্ক করে: ইসলামের আলোকে, বজ্রপাত মানুষকে আল্লাহর কুদরতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যা ঈমান বৃদ্ধি করে।
মন্তব্য। বজ্রপাত হলে কি করতে হবে ও কি করা উচিত নয়
বজ্রপাত হলে কি করতে হবে ও কি করা উচিত নয় এই আর্টিকেল্টি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে এবং আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তবে আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করুন এবং তাদেরও জানার সুযোগ করে দিন বজ্রপাত হলে কি করতে হবে ও কি করা উচিত নয়।
আরও নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে এই ওয়েবসাইটটি প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করুন। ধন্যবাদ এতক্ষণ আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে এই পোস্টটির সাথে থাকার জন্য।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url