বাচ্চা কান্না করলে কি দোয়া পড়তে হয়

আজকের পোস্টের মূল আলোচনার বিষয় বাচ্চা কান্না করলে কি দোয়া পড়তে হয়। বাচ্চা কান্না করলে মা বাবার উদ্বেগের সীমা থাকে না। আর সেই কান্না যদি অতিরিক্ত হয় তাহলে বাচ্চার মায়ের বুক ধড়ফড়িয়ে উঠে।
আজকের এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন বাচ্চা কান্না করলে কি দোয়া পড়তে হয় সে সম্পর্কে। বিস্তারিত আলোচনা জানতে এই পোস্টটির সাথেই থাকুন।

বাচ্চা কান্না করলে কি দোয়া পড়তে হয়

ছোট বাচ্চা কান্না করবে এটাই স্বাভাবিক। বাচ্চার এই কান্না থামানোর জন্য কিছু দোয়া রয়েছে। আর এই দোয়া ও আয়াতগুলো  পাঠ করলে আল্লাহর রহমতে ও বরকতে শিশুর মন শান্ত হয় ও কান্না থামে ইনশা’আল্লাহ।  বাচ্চা কান্না করলে  নিচে কয়েকটি দোয়া দেওয়া হলো।

 ১. বাচ্চাকে শান্ত করার দোয়া

আরবি: اللّٰهُمَّ أَذْهِبْ عَنْهُ سُوءَهَا وَفَسَادَهَا

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আযহিব ‘আনহু সু’আহা ওয়া ফাসাদাহা। অর্থ: হে আল্লাহ! এর অশান্তি ও কষ্ট দূর করে দিন।

২. আয়াতুল কুরসি পাঠ করা: সূরা: আল-বাকারা (২:২৫৫)। শিশুর পাশে বা তার উপর হালকা ফুঁ দিয়ে পাঠ করা যায়। এতে জিন, শয়তান ও অদৃশ্য ভয়ের প্রভাব থেকে বাচ্চা নিরাপদ থাকে।

 ৩. সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস: এই দুটি সূরা (কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক, কুল আউযু বিরাব্বিন নাস)। বাচ্চার উপর তিনবার করে পড়ে ফুঁ দিলে আল্লাহর রহমতে কান্না কমে যায়।

৪. নবীজির শেখানো দোয়া (দুশ্চিন্তা ও কষ্ট দূর করার জন্য): আরবি: أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ

উচ্চারণ: আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন। ওয়া মিন কুল্লি ‘আইনিন লাম্মাহ।

অর্থ: আমি আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালিমার আশ্রয় চাই প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী ও কুদৃষ্টি থেকে।

নবী করিম হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর উপর এই দোয়া পড়তেন।

বাচ্চাদের কান্না থামানোর উপায়

নিচে বয়সভিত্তিক ও সাধারণ, প্র্যারকটিক্যাল উপায়গুলো দিলাম যেগুলো প্রায়ই কাজ করে। চেষ্টা করে দেখো; বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এক বা দুইটি উপায় মিলিয়ে কাজে দেয়। যদি কান্না অব্যাহত থাকে বা সম্মিলিত সমস্যা মনে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
  • দ্রুত চেকলিস্ট (প্রথম দেখে নেওয়া)
  • ক্ষুধা 
  • ডায়াপার ভেজা/বিষাক্ত?
  • গরম/ঠান্ডা — উপযুক্ত পোশাক আছে কি?
  • ত্রুটি/আঘাত — কোনো অংশে লাল, ফোলা বা অসহ্য ব্যথা?
  • জ্বর বা খেতে অঘ্রাহ — সারা শরীর অস্বাভাবিক?
ক) নবজাতক (0–3 মাস)
  • কোলে নেওয়া — তাপ ও মাতৃক কোলের স্পর্শ সবচেয়ে দ্রুত সান্ত্বনা দেয়।
  • রানিং/গতি — কানের কাছে হালকা ঢেউ (গাড়ি বা হাঁটা) বা স্লো গিমিক করে দোলা।
  • হৃদস্ফূর্তি বা হুইটোন — পাখা/ভ্যাকুয়াম/ফ্যান বা অ্যাপের সাদা শব্দ (white noise)।
  • মরমর/ফুঁ দেওয়া দোয়া — আগের মেসেজের সূরা/দোয়া/আয়াত (আয়াতুল কুরসি, ফালাক-নাস, নবীর আউযু) পড়ে হালকা ফুঁ দিলে অনেক মা-বাবার কাছেই কাজ করে।
  • বুর্পিং — খাওয়ার পরে বুকে মাথা উচু করে বোল্ড করে আর বুকে হালকা চাপ দিয়ে বায়ু বের করানো।
খ) ইন্ফ্যান্ট (3–12 মাস)
  • বন্দোবস্ত ও ব্যস্ততা — প্যাসিফায়ার/ছোট খেলনা, রঙিন মোবাইল।
  • পেটের সমস্যা (গ্যাস/কোলিক) — বাচ্চার পা বাইসাইকেল মত চালানো, পেট মাইল্ড ম্যাসাজ (ক্লকওয়াইজ), গরম পানির ব্যাগ (হালকা গরম টাওয়েল) পেটের উপর।
  • টিউম-টু-টিউম কেয়ার — কিছু বাচ্চা আগুন-নশ্বর (teething)–এ কাদে বেশি; দুধ/চিবানোর জিনিস দিতে পারো।
  • রুটিন — ঘুম ও খাওয়ার রুটিন পজিটিভ এফেক্ট দেয়।
গ) টডলার (1–3 বছর)
  • ডাইভারশন ও নজর দেওয়া — গান, রঙিন বই, চলে এমন খেলা, বল।
  • ভাষায় বোঝানো — “আমি তোমাকে বোঝি” বলে শান্ত কণ্ঠে কথা বলা; সেই সাথে বিকল্প কার্য দেওয়া।
  • সীমা ও সাধারণ পদক্ষেপ — কখন কাঁদা চলে যাবে বলে সংক্ষিপ্ত, স্থির নিয়ম (প্রতিশ্রুতি ভুল না করবে)।
  • হালকা গলা করে গান/লালন — সিম্পল ল্যালে বা তোমার নিজের কণ্ঠ।
  • হালকা স্পর্শ ও মাসাজ — পিঠে বা পায়ে হালকা আদর।
  • মখন/শিবির (swaddle) — নবজাতকে হঠাৎ রিফ্লেক্স কমাতে বেঁধে রাখা (নিরাপদভাবে)।
  • মোশন/সফট ড্রাইভ — গাড়ি চালানো অনেক বাচ্চাকে শাসন করে।
  • প্যারেন্টের শান্ত থাকা — মা-বাবার চাপ কম রাখার চেষ্টা—ধান্ধ্য কণ্ঠ শিশুকে শান্ত করে।
  • পেইন চেক — কান, মুখ, গলা, ত্বকের সংক্রমণ দেখো (কোনো অস্বাভাবিকতা থাকলে ডাক্তারের কাছে).
কখন ডাক্তার দেখাবার প্রয়োজন
  • ৩–৪ ঘণ্টার বেশি অবিরাম কান্না এবং শান্ত না হওয়া।
  • ভবান/নিশ্চিত গতি কমে যাওয়া, খাবার না খাওয়া বা জ্বর।
  • কান্নার সাথে শ্বাসকষ্ট, নীলাভ ঠোঁট, জ্ঞানহীনতা, বিষন্নতা।
  • দেহে আঘাত বা ফোলা/র‌্যাশ দেখা গেলে।
  • দ্রুত ১–২ মিনিটে চেষ্টা করার রুটিন (মানুষদের সুবিধার জন্য)
  • দ্রুত চেকলিস্ট (ক্ষুধা, ডায়াপার, তাপ)।
  • কোলে নিয়ে ধীরে ধীরে হাঁট (১–২ মিনিট)।
  • পেট/বুর্পিং চেক করো; গ্যাস সন্দেহ হলে পা বাইসাইকেল।
  • হালকা গান/সাদা শব্দ চালাও।
  • কাজ না হলে ডাক্তারকে ফোন করো।

নবজাতক শিশুর কান্নার কারণ

নবজাতক শিশুর (০–২ মাস বয়সের) কান্না স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় বিষয়। কারণ ওর এটা-ই একমাত্র ভাষা যার মাধ্যমে সে জানায়, কিছু দরকার বা অস্বস্তি হচ্ছে। তবে প্রতিটি কান্নার পেছনে আলাদা কারণ থাকতে পারে। নিচে সহজভাবে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো।

১. ক্ষুধা বা দুধ চাওয়া: সবচেয়ে সাধারণ কারণ। নবজাতক সাধারণত প্রতি ২–৩ ঘণ্টা পরপর দুধ চায়। চিহ্ন: কান্নার আগে মুখ খোঁজে, হাত চোষে, ঠোঁট নাড়ে।

২. ডায়াপার ভেজা বা নোংরা হওয়া: নরম ত্বকে ভেজা ডায়াপার অস্বস্তি দেয়। ডায়াপার বদলালে শিশুটি সাধারণত চুপ হয়ে যায়।

৩. ঘুম পেতে থাকা বা অতিরিক্ত ক্লান্তি: শিশু বেশি আওয়াজ বা আলোতে ক্লান্ত হয়ে কাঁদতে পারে। শান্ত, অন্ধকার, ঠান্ডা পরিবেশে কোলে নিয়ে রাখলে ঘুমিয়ে পড়ে।

৪. পেটের গ্যাস বা পেট ব্যথা: নবজাতকের পাচনতন্ত্র পুরোপুরি গঠিত নয়, তাই গ্যাস জমে অস্বস্তি হয়। কান্নার সময় পা ভাঁজ করে, পেট শক্ত থাকে।

সমাধান: পেটের উপর হালকা মালিশ, “বাইসাইকেল এক্সারসাইজ”, বুর্প করানো, বা প্রয়োজন হলে ডাক্তারের পরামর্শে gripe water / endi drops দেওয়া।

৫. ঠান্ডা বা গরম লাগা: শিশু অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডায় কাঁদে। তার পায়ের তলা বা ঘাড় স্পর্শ করে বোঝা যায় — ঠান্ডা বা ঘামছে কিনা।

৬. আদর ও কোলে চাওয়া: শিশু মায়ের কণ্ঠ ও গন্ধ চিনে নেয় জন্মের পর থেকেই। কখনো শুধুই মায়ের কোলে থাকার ইচ্ছা থেকেও কাঁদে।

৭. ঘুম ভেঙে যাওয়া বা ভয় পাওয়া: অতিরিক্ত শব্দ, আলো, হঠাৎ নড়াচড়া— এসবেও কান্না শুরু হতে পারে। মৃদু আলো, হালকা দোলনা ও সান্ত্বনার কণ্ঠ সাহায্য করে।

৮. অসুস্থতা বা ব্যথা: যদি কান্না থামছে না, কান্নার ধরন “তীক্ষ্ণ বা করুণ” হয়, খেতে না চায়, জ্বর আসে। তাহলে ডাক্তারের কাছে দ্রুত যেতে হবে। হতে পারে কান ইনফেকশন, পেটের সমস্যা, ত্বকের র‍্যাশ ইত্যাদি।

৯. অতিরিক্ত উত্তেজনা বা আলো–শব্দ: অতিরিক্ত লোকজন, আলো, টেলিভিশনের আওয়াজ নবজাতককে অস্থির করে তোলে।

বাচ্চা বেশি কান্না করলে কী হয়?

স্বাভাবিক কারণেও হতে পারে। নবজাতকরা দিনে ১–৩ ঘণ্টা পর্যন্ত কাঁদতে পারে। এটা একদমই স্বাভাবিক, কারণ কান্নাই তাদের চাওয়া-পাওয়া বোঝানোর উপায়। 

তবে কান্না যদি অস্বাভাবিক রকম বেশি হয় (দীর্ঘ সময়, জোরে, শান্ত না হওয়া) তাহলে সতর্ক হতে হবে।

অতিরিক্ত কান্নার ফলে যা হতে পারে:

ক) শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়: বেশি সময় ধরে কান্না করলে বাচ্চা খুব ক্লান্ত হয়ে যায়, ঘুম আসে না, বুকের দুধ খেতে চায় না।

খ) পেটের ভেতর বাত বা গ্যাস বাড়ে: কান্নার সময় বাচ্চা বাতাস গিলে ফেলে → ফলে পেট ফুলে যায় ও আরও অস্বস্তি হয়।

সমাধান: কান্নার পর বুর্প করানো, পেটে হালকা মালিশ করা।অতিরিক্ত কান্না কখনও ‘কোলিক’ এর লক্ষণ হতে পারে

গ) কোলিক: বাচ্চার বারবার, নির্দিষ্ট সময়ে (বিশেষ করে সন্ধ্যায়) তীব্র কান্না, যা ৩ ঘণ্টারও বেশি থাকে। এটা সাধারণত পাচনতন্ত্রের অস্বস্তির কারণে হয়।

ঘ) ঘুম ও খাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়: যদি বাচ্চা বারবার কাঁদে, ঘুম ভেঙে যায় বা দুধ কম খায় → তার ওজন বাড়তে দেরি হতে পারে।

ঙ) কিছু ক্ষেত্রে অসুস্থতার ইঙ্গিত: বেশি কান্না কখনও নিচের সমস্যাগুলোর কারণেও হতে পারে। যেমন: জ্বর, কানে ব্যথা বা ইনফেকশন, পেট ব্যথা, গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াপার র‍্যাশ, ঠান্ডা/গরম লাগা, চোখে বা নাকে ইনফেকশন।

বাচ্চা রাতে কান্না করে কেন

এইটা খুব সাধারণ সমস্যা, বিশেষ করে নবজাতক ও এক বছরের নিচের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। রাতে কান্নার অনেক কারণ থাকতে পারে। বিস্তারিতভাবে নিম্নে বাচ্চা রাতে কান্নার প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলো:

ক) ক্ষুধা বা দুধ চাওয়া: নবজাতক প্রায় প্রতি ২–৩ ঘণ্টা খেতে চায়। রাতে হঠাৎ কান্না করলে প্রায়শই তার মানে “দুধ চাই”।
চিহ্ন: মুখ খোঁজে, হাত চুষে, ঠোঁট নাড়ে।

খ) ঘুমের সমস্যা: অনেক বাচ্চা দিনে ঘুমাচ্ছে, রাতের ঘুমের রুটিন ঠিক নয়। হঠাৎ আলো বা শব্দে ঘুম ভেঙে কান্না শুরু হতে পারে।

গ) গ্যাস বা পেটের অস্বস্তি: নবজাতকের পাচনতন্ত্র এখনও পুরোপুরি তৈরি হয়নি, গ্যাস জমতে পারে। চিহ্ন: পেট শক্ত, পা ভাঁজ করা, করুণ কান্না। সমাধান: পেট ম্যাসাজ, পা বাইসাইকেল, বুর্প করানো।

ঘ) ঠান্ডা বা গরম লাগা: রাতে তাপমাত্রা হঠাৎ কমে বা বেশি হলে বাচ্চা অস্বস্তিতে কাঁদে। চিহ্ন: হাত-পা ঠান্ডা বা ঘামছে, ঘাড়/পিঠ স্পর্শে বুঝা যায়।

ঙ) কোলে চাওয়া বা নিরাপদ অনুভব করতে চাওয়া: বাচ্চা মায়ের কণ্ঠ, স্পর্শ ও ঘ্রাণ চায়। রাতে একা থাকার সময় ঘুম ভেঙে কান্না করতে পারে।

চ) অসুস্থতা বা ব্যথা: জ্বর, কানে ব্যথা, ডায়াপার র‍্যাশ, পেট ব্যথা ইত্যাদি। চিহ্ন: কান্না থামছে না, খেতে চায় না, শরীর গরম বা অস্বাভাবিক আচরণ। এমন ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ জরুরি।

ছ) কোলিক (Colic): সন্ধ্যা/রাতের দিকে দীর্ঘক্ষণ কান্না। সাধারণত নবজাতক ২–৩ মাস বয়সে বেশি দেখা যায়।







এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url