দাড়ি রাখার ২০ টি উপকারিতা ও ইসলামে দাড়ি রাখার গুরুত্ব

দাড়ি রাখার ২০ টি উপকারিতা ও ইসলামে দাড়ি রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে জানার জন্য আপনি কি আগ্রহী? তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য উপকারী হতে চলেছে।

কেননা আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন দাড়ি রাখার ২০ টি উপকারিতা ও ইসলামে দাড়ি রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। চলুন, তাহলে দেরি না করে আর্টিকেলর মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

দাড়ি রাখার ২০ টি উপকারিতা 

দাড়ি রাখা শুধু ধর্মীয় বা ফ্যাশনের অংশ নয়, বরং এটি স্বাস্থ্য, ব্যক্তিত্ব, এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও অনেক উপকার বয়ে আনে। নিচে দাড়ি রাখার ২০টি উপকারিতা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

১. সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা: দাড়ি ত্বককে UVA ও UVB রশ্মি থেকে রক্ষা করে, যা ত্বকের ক্যান্সার, বার্ধক্য ও দাগের সম্ভাবনা কমায়। গবেষণা: ২০১২ সালে Radiation Protection Dosimetry জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, দাড়ি ৯৫% পর্যন্ত UV রশ্মি আটকাতে পারে।

উপকার: ত্বকের ক্যান্সার এবং সূর্যের কারণে হওয়া বার্ধক্য রোধ করে।

২. ত্বককে ঠান্ডা ও আর্দ্র রাখে: দাড়ি ত্বককে পরিবেশের ধুলোবালি থেকে আড়াল করে এবং ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ধরে রাখে। দাড়ি মুখের চামড়াকে সরাসরি বাতাস ও সূর্যের সংস্পর্শ থেকে রক্ষা করে, ফলে প্রাকৃতিক তেল ও আর্দ্রতা বজায় থাকে।

৩. ব্রণ কমায়: দাড়ি ত্বকে সরাসরি ব্লেড চলার কারণে হওয়া র‌্যাশ ও ইনফেকশন এড়াতে সাহায্য করে, ফলে ব্রণ কম হয়। শেভ করার সময় ব্লেড ত্বকে ছোট কাটা করে যা ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে। দাড়ি রাখলে শেভের প্রয়োজন পড়ে না।

৪. ত্বকের কাটা-ছেঁড়া ও জ্বালা থেকে রক্ষা করে: দাড়ি রাখলে প্রতিদিন শেভ করার প্রয়োজন পড়ে না, ফলে ব্লেডের কাটা ও রেজরের ইনফ্ল্যামেশন এড়ানো যায়।

৫. ঠান্ডা-সর্দি থেকে সুরক্ষা দেয়: দাড়ি গলা ও মুখ ঢেকে রাখে, যার ফলে শীতে সর্দি-কাশি কম হয়। দাড়ি গলা ও মুখ উষ্ণ রাখে, যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৬. এলার্জি প্রতিরোধে সাহায্য করে: দাড়ি নাক ও মুখে ধুলা, পরাগ বা অন্যান্য অ্যালার্জেন ঢুকতে বাধা দেয়।

৭. পেশাদার চেহারা গঠন করে: গবেষণায় দেখা গেছে Journal of Evolutionary Biology (2016) অনুযায়ী, দাড়িওয়ালা পুরুষদের অধিক পরিপক্ক, আত্মবিশ্বাসী ও কর্তৃত্ববান বলে মনে করা হয়।

৮. মুখের গঠন আরও আকর্ষণীয় দেখায়: দাড়ি মুখের গঠনকে হাইলাইট করে এবং চিবুক ও চোয়ালকে আরও শক্তিশালী দেখায়।

৯. পুরুষত্বের প্রতীক: ঐতিহাসিকভাবে বা ইতিহাসে রোমান, গ্রীক এবং মুসলিম সাহসী নেতাদের অধিকাংশই দাড়িওয়ালা ছিলেন। এটি শক্তি ও মর্যাদার প্রতীক।

১০. ফ্যাশনেবল লুক: সঠিকভাবে ট্রিম করে রাখলে দাড়ি একটি আধুনিক ও স্টাইলিশ লুক দেয়।

১১. সময় বাঁচায়: প্রতিদিন শেভ করার ঝামেলা না থাকলে সময় ও এনার্জি সাশ্রয় হয়। এর ফলে প্রতিদিন শেভে ১০-১৫ মিনিট সময় যায়।

১২. টাকা সাশ্রয় করে: ব্লেড, শেভিং ক্রিম, আফটার শেভ ইত্যাদির পেছনে খরচ কমে যায়।

১৩. হরমোনাল ভারসাম্য প্রকাশ করে: টেস্টোস্টেরনের স্বাস্থ্যকর উপস্থিতি দাড়ি বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত, যা পুরুষের স্বাস্থ্য প্রকাশ করে এবং স্বাস্থ্যবান পুরুষের দাড়ি সাধারণত ঘন হয়।

১৪. চর্মরোগ প্রতিরোধে সহায়ক: দাড়ি ত্বককে বাইরের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ফলে একজিমা বা চুলকানির ঝুঁকি কমে।

১৫. পরিচয়গত বৈশিষ্ট্য দেয়: দাড়ি একজন ব্যক্তিকে আলাদা লুক দেয় এবং সামাজিকভাবে তাকে স্বীকৃতি দিতে সাহায্য করে।

১৬. কমনীয়তা বাড়ায়: অনেক নারী দাড়িওয়ালা পুরুষকে অধিক আকর্ষণীয় বলে মনে করেন। Oxford Journal এর এক গবেষণায় দেখা যায়, বেশিরভাগ নারী দাড়িওয়ালা পুরুষকে "বিশ্বস্ত ও পুরুষালী" মনে করেন।

১৭. আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে: নিজস্বতা এবং পারসোনাল স্টাইলের কারণে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।

১৮. বয়স ঢেকে রাখে: দাড়ি মুখের বলিরেখা ও চামড়ার ঢিলাভাব ঢেকে রাখতে সাহায্য করে।

১৯. মুখের উষ্ণতা ধরে রাখে: শীতের সময় দাড়ি মুখ গরম রাখে, ঠান্ডাজনিত সমস্যার ঝুঁকি কমায়।

২০. ধর্মীয়/সাংস্কৃতিক পরিচয় রক্ষা করে: অনেক ধর্মে দাড়ি রাখা পুণ্যের কাজ বা আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়। 
  • ইসলাম: হাদিস অনুযায়ী, রাসূল (সাঃ) দাড়ি রাখতে বলেছেন: "দাড়ি বড় কর এবং গোঁফ ছোট করো।" – (সহীহ বুখারী: ৫৮৯২)
  • হিন্দু ধর্ম: অনেক ঋষি ও সাধুদের দাড়ি রাখা একটি পবিত্রতার চিহ্ন।
  • সিখ ধর্ম: গুরু গোবিন্দ সিং দাড়ি কাটা নিষিদ্ধ করেছিলেন। দাড়ি রাখা ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা। যায়, ফলে বয়স কম মনে হয়।

ইসলামে দাড়ি রাখার গুরুত্ব

ইসলামে দাড়ি রাখার গুরুত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক বিষয় হিসেবে বিবেচিত। এটি শুধু একটি বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং সুন্নাহ, নবী করিম (সাঃ)-এর আদর্শ ও মুসলিম পরিচয়ের একটি অনন্য নিদর্শন। ইসলামে দাড়ি রাখার গুরুত্ব নিম্নরুপ:

১. রাসূল (সাঃ)-এর আদেশ:  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "তোমরা গোঁফ ছোট করো এবং দাড়ি বড় করো। মুশরিকদের (অন্য ধর্মাবলম্বীদের) বিপরীত করো।" — সহীহ বুখারী: ৫৮৯২, সহীহ মুসলিম: ২৫৮

এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, দাড়ি রাখা শুধু সুপারিশ নয়, বরং একটি সুন্নাহ যার মাধ্যমে মুসলিমরা অমুসলিমদের থেকে নিজেদের আলাদা পরিচয় প্রকাশ করে।

২. দাড়ি রাখা ফিতরার অংশ: রাসূল (সাঃ) বলেন: “পাঁচটি জিনিস ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত— গোঁফ ছাঁটা, দাড়ি রাখা, মিসওয়াক করা, নখ কাটা, এবং বগলের চুল উঠানো।” — সহীহ মুসলিম: ২৫৭। ফিতরা মানে মানুষকে আল্লাহ যে স্বাভাবিক ও পবিত্র প্রকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্যে দাড়ি রাখা অন্যতম।

৩. সাহাবায়ে কেরামদের দাড়ি রাখা: সমস্ত খলিফা, সাহাবি এবং তাবেয়িনগণ দাড়ি রাখতেন। এটি তাঁদের জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ ছিল, এবং কেউ দাড়ি কাটা পছন্দ করতেন না।

৪. মুসলিম উলামা ও চার মাযহাবের অভিমত: চার মাযহাবের (হানাফি, মালিকি, শাফেয়ি, হাম্বলি) অধিকাংশ ফকীহগণ দাড়ি কাটা নিষিদ্ধ (হারাম) বা অন্তত নাজায়েয বলে মত দিয়েছেন।

উদাহরণ: ইমাম মালিক (রহ.) বলেন: দাড়ি ছাঁটা নবীজীর সুন্নাহর বিরুদ্ধে। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ও তাঁর অনুসারীরা বলেন: এক মুষ্টির নিচে দাড়ি কাটা মাকরূহ তাহরিমি (হারামের কাছাকাছি)।

৫. মুসলিম পরিচয়ের প্রতীক: দাড়ি মুসলিমদের একটি আলাদা বাহ্যিক পরিচয়। অনেকে শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্য দাড়ি রাখলেও ইসলামে এটি আত্মিক ও ধর্মীয় চেতনার অংশ।

৬. কিয়ামতের দিন সুন্নাহ অনুযায়ী চেহারা আলোকিত হবে: যারা দাড়ি রেখে নবীজীর সুন্নাহ মেনে চলেন, তাদের চেহারায় কিয়ামতের দিন নূর বা আলো থাকবে বলে হাদীসে ইঙ্গিত রয়েছে।

ইসলামে দাড়ি রাখা হলো:
  • সুন্নাহ
  • ফিতরাত
  • রাসূলের আদেশ
  • মুসলিম পরিচয়ের চিহ্ন
তবে এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের দাড়ি রাখার সঙ্গে মুসলিম আদর্শ, আচরণ, ও চারিত্রিক গুণাবলিও বজায় রাখতে হবে।

সুন্নতি দাড়ি রাখার নিয়ম

সুন্নতি দাড়ি রাখার নিয়ম ইসলামী শরীয়তের আলোকে সুস্পষ্টভাবে নির্ধারিত। দাড়ি রাখা শুধু একটি ঐচ্ছিক ফ্যাশন নয়, বরং এটি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ এবং মুসলিম পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিচে দাড়ি রাখার সুন্নতি নিয়মগুলো তুলে ধরা হলো:
সুন্নতি দাড়ি রাখার নিয়ম

১. দাড়ি কাটা নয়, দাড়ি রাখা: রাসূল (সাঃ) বলেছেন: “দাড়ি বড় করো এবং গোঁফ ছোট করো।” (সহীহ বুখারী: ৫৮৯২; সহীহ মুসলিম: ২৫৮) অর্থাৎ দাড়ি রাখা নবীর আদেশ; একে ছোট করা, কামানো বা মুছে ফেলা সুন্নাহর পরিপন্থী।

২. দাড়ির দৈর্ঘ্য – এক মুষ্টি পরিমাণ: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন: “রাসূল (সাঃ)-এর নির্দেশ অনুযায়ী আমি গোঁফ ছোট করি এবং দাড়ি বড় করি। যখন দাড়ি বড় হয়ে যেত, তখন এক মুষ্টির চেয়ে যা বেশি হতো, তা কেটে ফেলতাম।” (সহীহ বুখারী: ৫৮৯৩)

ফিকহি সিদ্ধান্ত: এক মুষ্টি পরিমাণ দাড়ি রাখা সুন্নত। এক মুষ্টির কম করে কাটা বা পুরোপুরি কামানো মাকরূহ তাহরিমি (হারামের কাছাকাছি) অথবা হারাম।

৩. দাড়ির আকার পরিবর্তন করা নিষেধ: ডিজাইন করে দাড়ি কাটা, লাইন দেওয়া, থিন করে রাখা বা স্টাইলিশভাবে হেয়ারকাটের মতো ট্রিম করা সুন্নাহবিরুদ্ধ। শরীয়তে কেবল অতিরিক্ত অংশ এক মুষ্টির পর কেটে রাখা বৈধ।

৪. গোঁফ ছোট করা (ছেঁটে রাখা): দাড়ি বড় করার পাশাপাশি গোঁফ ছোট রাখা বা কাটার নির্দেশও আছে। আর তা হলো "তোমরা গোঁফ ছোট করো ও দাড়ি বড় করো এবং অমুসলিমদের বিপরীত করো।" (সহীহ মুসলিম: ২৫৮)

৫. নিয়ত সহকারে রাখা:  শুধু ফ্যাশনের জন্য নয়, বরং আল্লাহ ও রাসূলের আদেশ মানার নিয়তে দাড়ি রাখলে এটি ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়।

৬. দাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা: দাড়ি সুন্নাহ মোতাবেক রাখার পাশাপাশি, তা পরিষ্কার রাখা, নিয়মিত ধোয়া এবং তেল ব্যবহার করা সুন্নাহর সৌন্দর্য ও গঠনের অংশ।

৭. মহিলাদের জন্য নয়: পুরুষদের দাড়ি রাখা সুন্নত, কিন্তু মহিলাদের জন্য দাড়ি রাখা নিষেধ এবং চিকিৎসাগত সমস্যা হলে চিকিৎসা গ্রহণ করা জায়েয।

সংক্ষেপে সুন্নতি দাড়ির বৈশিষ্ট্য: বিষয় সুন্নাহ অনুযায়ী
  • দৈর্ঘ্য কমপক্ষে এক মুষ্টি
  • রক্ষণাবেক্ষণ পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন, সুগন্ধি ব্যবহার
  • গোঁফ ছোট করে ছাঁটা বা পুরোপুরি কাটা
  • আকৃতি প্রাকৃতিকভাবে বাড়তে দেওয়া
  • ডিজাইন/লাইনিং নিষিদ্ধ

দাড়ি না রাখার শাস্তি

ইসলামে দাড়ি না রাখার শাস্তি সরাসরি কুরআনে উল্লেখ না থাকলেও, হাদীস ও ফিকহের আলোকে এটি একটি গুরুতর অবহেলা হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি রাসূল (সা.)-এর সুস্পষ্ট আদেশ অমান্য করার শামিল, ফলে অনেক ইসলামি ফকীহগণ এটিকে হারাম বা মাকরূহে তাহরিমি (হারামের নিকটবর্তী গুনাহ) বলেছেন।

১. দাড়ি না রাখার ফিকহি অবস্থান: মাযহাব মতে
  • হানাফি এক মুষ্টির কম দাড়ি রাখা বা কামানো মাকরূহ তাহরিমি (গুরুতর গোনাহ)।
  • মালিকি দাড়ি কামানো হারাম।
  • শাফেয়ি দাড়ি কামানো মাকরূহ তবে শাস্তিযোগ্য।
  • হাম্বলি দাড়ি কামানো হারাম এবং নবীর আদেশ অমান্য।
২. হাদীস দ্বারা সতর্কতা: নবীর সুস্পষ্ট আদেশ: “গোঁফ ছোট করো এবং দাড়ি বড় করো।”
(সহীহ বুখারী: ৫৮৯২, সহীহ মুসলিম: ২৫৮)। এটি একটি সাহি হাদীস ও নবীর ফারমান। কোনো মুসলমান যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এ আদেশ লঙ্ঘন করে, তাহলে তা গোনাহে কবীরা (বড় গোনাহ) হিসেবে গণ্য হতে পারে।

৩. দাড়ি কামানো = অমুসলিমদের অনুকরণ“: তোমরা মুশরিকদের (অমুসলিমদের) বিপরীত হও।”(সহীহ মুসলিম: ২৫৮). দাড়ি কামানোকে রাসূল (সা.) অমুসলিমদের অনুকরণ বলেই বিবেচনা করেছেন।

৪. ইসলামি শাসনে শাস্তির বিধান (ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট): ইতিহাসে দেখা যায়, অনেক ইসলামী শাসনব্যবস্থায় দাড়ি না রাখা ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

কিছু সালাফি ও হাম্বলি রাষ্ট্রে দাড়ি কামানোর কারণে প্রকাশ্যে নসিহত, ফাইন বা সমাজচ্যুতির নজিরও রয়েছে। তবে বর্তমান সময়ে ইসলামি রাষ্ট্র না থাকায় এ শাস্তি মূলত আখিরাতের দিকে স্থানান্তরিত।

৫. আখিরাতের শাস্তি (তাফসীর ও হাদীস দ্বারা ইঙ্গিত): যে ব্যক্তি জেনে-শুনে রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ ত্যাগ করে, তার জন্য কঠিন শাস্তির হুমকি এসেছে: “যে আমার সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আমার দলভুক্ত নয়।” — সহীহ বুখারী: ৫০৬৩

এ হাদীসের আলোকে অনেক উলামা বলেন, দাড়ি না রাখা সুন্নাহবিরোধিতা এবং আখিরাতে রাসূলের শাফায়াত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হতে পারে।

৬. যদি কেউ অজ্ঞতাবশত বা ভুলে না রাখে?: আল্লাহ তায়ালা বলেন: “যারা ভুলক্রমে গোনাহ করে, অতঃপর তাওবা করে— আমি তাদের তাওবা কবুল করি।” (সূরা আন-নিসা: ১৭)

অতএব, কেউ যদি আগে দাড়ি না রাখে এবং পরে অনুতপ্ত হয়ে দাড়ি রাখতে শুরু করে, তাহলে ইনশাআল্লাহ তার তাওবা কবুল হবে।

দাড়ি রাখা কি সুন্নাত না ওয়াজিব


দাড়ি রাখা ইসলামে "সুন্নাত" না "ওয়াজিব" — এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, এবং এর উত্তর দেওয়ার জন্য হাদীস, সাহাবায়ে কেরামের আমল ও ফিকহি মাযহাবের মতামত বিশ্লেষণ করতে হয়।
দাড়ি রাখা: সুন্নাত না ওয়াজিব?

হাদীস দ্বারা নির্দেশ: যখন" রাসূল (সা.) কোনো কাজ করতে সরাসরি আদেশ দেন, তা ওয়াজিব গণ্য হয়, যদি না অন্য প্রমাণ থাকে। সাহাবায়ে কেরামের আমল সাহাবায়ে কেরাম দাড়ি রাখা ওয়াজিব হিসেবে পালন করতেন। 
  • ইসলামি শাস্ত্র অনুযায়ী: ওয়াজিব মানে, পালন করা ফরজের কাছাকাছি, না মানলে গুনাহ।
  • সুন্নাতে মুয়াক্কাদা মানে: নবীজি নিয়মিত করেছেন, বর্জন করলে গুনাহ হয়।
  • সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা: করলে সওয়াব, না করলেও গুনাহ নেই।
দাড়ি রাখা — "সুন্নাতে মুয়াক্কাদা" বা "ওয়াজিব" — অধিকাংশ ফকীহের মতে। না রাখলে গুনাহ।

দাড়ি না রাখার ক্ষতি

দাড়ি না রাখার ক্ষতি ইসলামি, শারীরিক ও সামাজিক—এই তিনটি দিক থেকেই হয়ে থাকে। নিচে প্রতিটি দিক বিশ্লেষণ করে দাড়ি না রাখার ক্ষতিগুলো তুলে ধরা হলো:

১. ধর্মীয় ক্ষতি (ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে)
  • সুন্নাহ অমান্য করা: দাড়ি রাখা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ। ইচ্ছাকৃতভাবে না রাখা মানে সুন্নাহ অমান্য করা, যা গুনাহ। রাসূলের শাফায়াত থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা। নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরায়, সে আমার দলভুক্ত নয়।”(সহীহ বুখারী: ৫০৬৩)।
  • ইসলামি পরিচয় মুছে ফেলা: দাড়ি মুসলিম পরিচয়ের প্রতীক। না রাখলে এক ধরনের আত্মপরিচয় বিলুপ্তির শামিল। যদি কেউ জেনে-শুনে দাড়ি না রাখে, তা হলে আখিরাতে শাস্তি ভোগ করতে হতে পারে, কারণ এটা সরাসরি রাসূলের হুকুম অমান্য।
২. শারীরিক ক্ষতি (চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে)

সংবেদনশীল ত্বকের সমস্যা: দাড়ি কামালে ত্বক সরাসরি সূর্যের আলো ও ধুলাবালুর সংস্পর্শে আসে, এতে: সানবার্ন, অ্যালার্জি, ত্বকে কাটা ও ইনফেকশন হতে পারে।

হরমোন ব্যালান্সে সমস্যা (দীর্ঘমেয়াদে): দাড়ি শরীরের পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরনের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। দাড়ি কাটা বা থিন করে রাখলে তা মনস্তাত্ত্বিক ও হরমোনজনিত ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে (বিশেষজ্ঞদের মতে)।

৩. সামাজিক ও মানসিক ক্ষতি

আত্মপরিচয়ের সংকট: অনেক মুসলমান দাড়ি না রেখে পশ্চিমা সংস্কৃতির অনুকরণ করেন, ফলে নিজস্ব ধর্মীয় আত্মবিশ্বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ইসলামী সম্মান হারানো: ইসলামি পরিবেশে দাড়ি না রাখা অনেক সময় নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির সৃষ্টি করে, যেমন: ইমামতির অযোগ্যতা, দাওয়াতি দুর্বলতা ইত্যাদি।

যদি কেউ দাড়ি না রেখে থাকেন, এখনই নিয়ত করে দাড়ি রাখা শুরু করুন, এবং সুন্নাহর এর গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনকে ধারণ করুন। এতে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ হবে, ইনশাআল্লাহ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url