পুরুষাঙ্গের চুলকানি কেন হয়-পুরুষাঙ্গের চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়

পুরুষাঙ্গের চুলকানি কেন হয়-পুরুষাঙ্গের চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কিত আলোচনা নিয়ে আজকে উপস্থিত হয়েছি আপনাদের সামনে। আমাদের মধ্যে অনেক পুরুষে আছেন যারা প্রসঙ্গে চুলকানির সাথে বেশ পরিচিত। তাদের জন্য আজকের এই পোস্টটি।
তাহলে চলুন সময় নষ্ট না পুরুষাঙ্গের চুলকানি কেন হয়-পুরুষাঙ্গের চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায় জেনে নিন আজকের এই পোস্টটির মাধ্যমে। চলুন, পোস্টটির মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

পুরুষাঙ্গের চুলকানি কেন হয়?

পুরুষাঙ্গে চুলকানি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটি হালকা অস্বস্তি থেকে শুরু করে গুরুতর সংক্রমণের লক্ষণও হতে পারে। নিচে পুরুষাঙ্গে চুলকানির প্রধান কারণগুলো ব্যাখ্যা করা হলো:

১. ছত্রাক সংক্রমণ (Fungal Infection / Tinea Cruris): এটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ। ঘাম জমে থাকা, টাইট আন্ডারওয়্যার, ভেজা থাকলে ছত্রাক জন্মায়। লক্ষণ: চুলকানি, লালচে র‍্যাশ, চামড়া উঠা, পেছনের দিকে ছড়িয়ে পড়া।

২. অ্যালার্জি বা চর্ম-অন্তর্নিহিত সমস্যা (Contact Dermatitis / Eczema): সাবান, ডিটারজেন্ট, লুব্রিকেন্ট, কনডমের ল্যাটেক্স বা অন্য কেমিক্যালে ত্বক প্রতিক্রিয়া করতে পারে। লক্ষণ: ত্বক শুষ্ক, ফেটে যাওয়া বা লাল হয়ে যাওয়া।

৩. অস্বাস্থ্যকর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: ঘন ঘন পরিষ্কার না করলে ঘাম, ধূলা, মৃত কোষ জমে চুলকানি হতে পারে। আবার অতিরিক্ত সাবান বা ঘষামাজা করলেও ত্বক শুষ্ক হয়ে গিয়ে চুলকানি হতে পারে।

৪. যৌনবাহিত রোগ (STD/STI): যেমন: হের্পিস, সিফিলিস, গনোরিয়া, ক্ল্যামাইডিয়া ইত্যাদি। লক্ষণ: চুলকানি, ফুসকুড়ি, ঘা, জ্বালাপোড়া বা প্রস্রাবে ব্যথা।

৫. পোকামাকড় বা উকুন (Pubic Lice / Scabies): যৌন সংস্পর্শ বা ঘনিষ্ঠ ব্যবহৃত জিনিস থেকে সংক্রমণ হতে পারে। লক্ষণ: তীব্র চুলকানি, বিশেষ করে রাতে, ছোট ফুসকুড়ি বা দাগ।

৬. ছত্রাক-ব্যাকটেরিয়ার মিশ্র সংক্রমণ: অনেক সময় একসঙ্গে দুই ধরনের সংক্রমণ হয়, ফলে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং শুধু সাধারণ ক্রিমে ভালো হয় না।

৭. অন্যান্য কারণ:
  • ডায়াবেটিস: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বেশি হয়।
  • হিট র‍্যাশ (ঘামাচি): গরমে ঘাম জমে লাল ফুসকুড়ি ও চুলকানি।
সতর্কতা ও করণীয়: দীর্ঘদিন ধরে চুলকানি থাকলে, বা ফুসকুড়ি, ঘা, দুর্গন্ধ, পুঁজ দেখা দিলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বা ইউরোলজিস্ট-এর পরামর্শ নেওয়া জরুরি। চুলকানির ধরন ও অন্যান্য লক্ষণ দেখে নির্ণয় করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

পুরুষাঙ্গের চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়

পুরুষাঙ্গের চুলকানি একটি অস্বস্তিকর সমস্যা যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে—যেমন ছত্রাক সংক্রমণ, ঘাম জমে থাকা, অ্যালার্জি, বা অপরিচ্ছন্নতা। 

নিচে কিছু ঘরোয়া উপায় বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো, যা সাধারণ চুলকানিতে উপকারে আসতে পারে:

১. সঠিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: প্রতিদিন হালকা গরম পানি দিয়ে পুরুষাঙ্গ ধুয়ে নিতে হবে। গোপনাঙ্গ পরিষ্কারে সাবল্ট অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করুন (যেমন বেবি সাবান বা pH-balanced সাবান)। 

পরিষ্কারের পর ভালোভাবে শুকিয়ে নিন। ভেজা অবস্থায় ছত্রাক জন্মাতে পারে।

২. নারকেল তেল: নারকেল তেলে রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ। চুলকানির স্থানে দিনে ২ বার সামান্য নারকেল তেল লাগান। এটি ত্বককে শান্ত রাখে এবং সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।

৩. লেবুর রস ও পানি: হালকা করে লেবুর রস ও পানি মিশিয়ে তুলার সাহায্যে আক্রান্ত জায়গায় আলতো করে মাখান। এটি ব্যাকটেরিয়া ও দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করতে পারে। তবে যদি ত্বক খুব সংবেদনশীল হয়, ব্যবহার না করাই ভালো।

৪. চন্দনের গুঁড়া ও গোলাপ জল: সামান্য চন্দনের গুঁড়ার সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের জ্বালা ও চুলকানি কমায়।

৫. দই (প্লেইন দই): প্রোবায়োটিক উপাদানযুক্ত প্লেইন দই চুলকানির জন্য খুব উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে ছত্রাকজনিত সংক্রমণে। সরাসরি আক্রান্ত স্থানে মেখে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন।

৬. নিম পাতা: নিম পাতা সেদ্ধ করে সেই পানি ঠান্ডা করে আক্রান্ত স্থানে ধুয়ে নিতে পারেন। নিমের অ্যান্টিসেপটিক গুণ ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কমাতে সহায়তা করে।

সতর্কতা: যদি চুলকানির সঙ্গে ফুসকুড়ি, র‍্যাশ, পুঁজ, দুর্গন্ধ বা ব্যথা থাকে, তবে এটি ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া বা যৌনবাহিত রোগের লক্ষণ হতে পারে—সে ক্ষেত্রে ডার্মাটোলজিস্ট বা ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নিন। ঘরোয়া প্রতিকার ২–৩ দিনের মধ্যে আরাম না দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

পুরুষাঙ্গের চুলকানি দূর করার ক্রিম

পুরুষাঙ্গের চুলকানি দূর করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওষুধি ক্রিম পাওয়া যায়। চুলকানির কারণ অনুসারে ক্রিম নির্বাচন করতে হয়—যেমন ছত্রাক (fungal), ব্যাকটেরিয়া, অ্যালার্জি, বা স্কিনের প্রদাহজনিত চুলকানি।

নিচে কিছু সাধারণ ও কার্যকর ক্রিমের নাম ও ব্যবহার দেয়া হলো:

১. ছত্রাক সংক্রমণের (Fungal Infection) জন্য:

a. Candid B Cream
  • উপাদান: Clotrimazole ও Beclomethasone
  • কাজ: ছত্রাক ও প্রদাহ দুটোর বিরুদ্ধেই কাজ করে।
  • ব্যবহার: দিনে ২ বার আক্রান্ত স্থানে ৭–১০ দিন লাগাতে হয়।
b. Canesten Cream (Clotrimazole 1%): শুধু ছত্রাক সংক্রমণে উপযোগী। হালকা সংক্রমণের জন্য কার্যকর।

c. Luliconazole Cream (Lulifin, Lulibet): গুরুতর ছত্রাক সংক্রমণের ক্ষেত্রে খুব কার্যকর।

২. ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের জন্য:
  • Fusidic Acid Cream (Fucidin): ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ ও চুলকানির জন্য ব্যবহৃত হয়। শুধুমাত্র ব্যাকটেরিয়াজনিত ফুসকুড়ি বা ঘায়ের জন্য উপযোগী।
৩. অ্যালার্জি বা সাধারণ চুলকানির জন্য:
  • Soframycin Cream: হালকা কাটা-ছেঁড়া বা অ্যালার্জিজনিত জ্বালাপোড়া ও চুলকানিতে উপকারী।
  • Hydrocortisone 1% Cream: অ্যালার্জিজনিত চুলকানি বা প্রদাহে ব্যবহৃত হয়। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করাই ভালো (সাধারণত ৫–৭ দিনের বেশি নয়)
সাথে কিছু অতিরিক্ত টিপস: প্রতিদিন গোসল করে গোপনাঙ্গ ও পাশের এলাকা ভালোভাবে শুকিয়ে নিন।
ঢিলেঢালা এবং সুতির আন্ডারওয়্যার পরুন। আর্দ্রতা এড়াতে পার্সোনাল পাউডার (যেমন: Neosporin Dusting Powder বা Candid Powder) ব্যবহার করতে পারেন। অন্যের তোয়ালে, আন্ডারওয়্যার বা বিছানা ব্যবহার করবেন না।

সতর্কতা: চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েডযুক্ত ক্রিম (যেমন: Betnovate, Quadriderm) দীর্ঘদিন ব্যবহার করবেন না। এতে ত্বক পাতলা হয়ে যেতে পারে বা সংক্রমণ লুকিয়ে যেতে পারে। 

ছেলেদের গোপনাঙ্গের পাশে চুলকানি দূর করার ওষুধ

ছেলেদের গোপনাঙ্গের পাশে চুলকানি সাধারণত ছত্রাক সংক্রমণ (Tinea Cruris বা Jock Itch) থেকে হয়ে থাকে। এ ধরনের সংক্রমণের জন্য বাজারে বেশ কিছু কার্যকর ওষুধ (ক্রিম ও ট্যাবলেট) রয়েছে।  নিচে কিছু সাধারণ ও কার্যকর ওষুধের নাম ও তাদের ব্যবহার পদ্ধতি দেওয়া হলো:

বাজারে পুরুষাঙ্গের চুলকানি দূর করার জন্য অনেক ঔষধ বা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। 
  • ফ্লুগাল ৫০ এমজি (Flugal 50 mg)
  • ফ্লুকোনাজল (Fluconazole)
  • ফেক্সোফেনাডিন (Fexofenadine)
  • লোরাটাডিন (Loratadine)
  • আর্টিকা 25 (Artica 25)
১. ফ্লুগাল ৫০এমজি: এই ঔষধটি ছত্রাক সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। দাদ, বগল ও কুচকিতে এবং গোপনাঙ্গে ছত্রাক সংক্রমণের ফলে চুলকানির সৃষ্টি করে। সেক্ষেত্রে এই ঔষধটি চিকিৎসকেরা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ফ্লুগাল প্রতি ৫০ এমজি ট্যাবলেটের দাম ৭২:৬৩ টাকা । 

২. ফ্লুকোনাজল: পুরুষের গোপনাঙ্গে চুলকানির জন্য এই ওষুধটি সেবন করার জন্য চিকিৎসক দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে থাকা ক্যান্ডিডিয়াসিস উপাদান ছত্রাক প্রতিহত করতে বেশ কার্যকরী। ফ্লুকোনাজল প্রতিটি ট্যাবলেটের মূল্য ১৯৮ থেকে ১৯৯টাকা।

৩. ফেক্সোফেনাডিন: এলার্জি জনিত কারণে অনেক সময় পুরুষের গোপনাঙ্গে প্রচুর চুলকানির সৃষ্টি হয়। ফেক্সোফেনাডিনে এন্টিহিস্টামিন জাতীয় উপাদান থাকে যার জন্য চুলকানি দ্রুত সেরে যায়। ফেক্সোফেনাডিন প্রতিটি ট্যাবলেটের মূল্য ৬৩:০০ টাকা।

৪. লোরাটাডিন: এলার্জির সমস্যা হলে অনেক সময় চুলকানি হলে সে চুলকানি থামতে চায় না এর জন্য  এর জন্য লোরাটাডিন সেবন করার জন্য চিকিৎসকগণ পরামর্শ দেন। এন্টিহিস্টামিন জাতীয় উপাদান রয়েছে লোরাটাডিনে। লোরাটাডিন ট্যাবলেট এর মূল্য ২৭:১৫ টাকা।

৫. আর্টিকা ২৫: জীবাণুর সংক্রমণ থেকে ত্বককে হা দান করতে এই ট্যাবলেট টি খুব কার্যকরী।  চিকিৎসকগণ পুরুষদের যৌনাঙ্গের ছত্রাক সংক্রমণ সংক্রমনের হাত থেকে ছাড়িয়ে তুলতে এই ওষুধটি খাওয়ার জন্য সাজেস্ট করেন । আর্টিকা ২৫ ঔষধের দাম ৮১.৫৪ টাকা।

লেখকের মতামত। পুরুষাঙ্গের চুলকানি কেন হয়-পুরুষাঙ্গের চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়

পুরুষাঙ্গের চুলকানি কেন হয়-পুরুষাঙ্গের চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায় এই আর্টিকেলটির একেবারে শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেছি। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং পরে আপনাদের ভালো লেগেছে। পুরুষাঙ্গের চুলকানি হলে সে পুরুষকে সকলের সামনে খুব খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। 

তাই প্রসঙ্গে চুলকানি পুরুষাঙ্গে চুলকানি দেখা দেয়ার দেখা দেওয়ার সাথে সাথে একজন বিশেষজ্ঞ যৌন ও চর্ম চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। সুপ্রিয় পাঠক, আজকের আলোচ্য বিষয় ছিল পুরুষাঙ্গের চুলকানি কেন হয়-পুরুষাঙ্গের চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়।

আশা করি পুরুষাঙ্গের চুলকানি কেন হয়-পুরুষাঙ্গের চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায় সেই সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এই পোষ্টটি আপনার প্রিয়জনদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারেন। 

এতে করে তারাও পুরুষাঙ্গের চুলকানি কেন হয়-পুরুষাঙ্গের চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায় সেই সম্পর্কে জানতে পারবে। এমন প্রয়োজনীয় আর্টিকেল পড়তে www.sumonworld.com ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url