ফরমালিন যুক্ত আম চেনার উপায় ও ফল ফরমালিন মুক্ত করার উপায়

ফরমালিন যুক্ত আম চেনার উপায় ও ফল ফরমালিন মুক্ত করার উপায় জানার জন্য আপনি কি আগ্রহী?  তাহলে আজকের এই পোস্টটি শুধুমাত্র আপনার জন্য উপকারী হতে চলেছে। 

কেননা এই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার মাধ্যমে জানতে পারবেন ফরমালিন যুক্ত আম চেনার উপায় ও ফল ফরমালিন মুক্ত করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। তাহলে চলুন এই আর্টিকেলটির মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

ফরমালিন কি?

ফরমালিন (Formalin) হলো এক ধরনের বর্ণহীন, তীব্র গন্ধযুক্ত রাসায়নিক দ্রবণ, যা মূলত ফর্মালডিহাইড (Formaldehyde) গ্যাসকে পানিতে (সাধারণত ৩৭-৪০%) দ্রবীভূত করে তৈরি করা হয়।

রাসায়নিক তথ্য:
  • মূল উপাদান: ফর্মালডিহাইড (CH₂O)
  • দ্রবণ: ফর্মালডিহাইড + পানি + কখনো কখনো মিথানল (Methanol) যেন দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়।

সংক্ষেপে: ফরমালিন একটি শক্তিশালী সংরক্ষণকারী রাসায়নিক, যার বৈধ ও অবৈধ ব্যবহার রয়েছে। খাবারে এটি একেবারেই নিষিদ্ধ কারণ এটি ক্যান্সারসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে।

ফরমালিন যুক্ত আম চেনার উপায়

ফরমালিন মেশানো আম চেনার কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে, তবে এগুলো শতভাগ নিশ্চিত না হলেও প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করার জন্য সহায়ক হতে পারে। নিচে কিছু সাধারণ পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো:

১. গন্ধে পার্থক্য: প্রাকৃতিকভাবে পাকা আমে একটি মিষ্টি, সুগন্ধি ঘ্রাণ থাকে। ফরমালিনযুক্ত আমে এই ঘ্রাণ কম থাকে বা কৃত্রিম ও রসকষহীন ঘ্রাণ হতে পারে।

২. রঙের ভিন্নতা: প্রাকৃতিক আমে পাকা অংশে হলুদাভ রং থাকবে, কিন্তু ডাঁটা ও আশপাশের অংশ কিছুটা সবুজ থাকতে পারে। ফরমালিনযুক্ত আম দেখতে পুরোপুরি সমান রঙের এবং খুব চকচকে দেখায়, যা অস্বাভাবিক।

৩. শক্তভাব অনুভব করা: প্রাকৃতিকভাবে পাকা আম তুলনামূলকভাবে নরম হয়। ফরমালিনে পাকা আম বেশ শক্ত এবং চাপ দিলে দেবে না।

৪. পানিতে ভিজিয়ে রাখা: আম কিছুক্ষণ (৩০-৪৫ মিনিট) পানিতে ভিজিয়ে রাখলে: যদি ফরমালিন থাকে, পানি ঘোলাটে বা দুধের মতো সাদা হতে পারে। তবে এটি সবসময় সঠিকভাবে কাজ না-ও করতে পারে।

৫. কাটার পরে পরিবর্তন লক্ষ করা: প্রাকৃতিক আম কাটার পর কিছুক্ষণের মধ্যে কালচে হয়ে যেতে পারে (অক্সিডাইজ হওয়া)। ফরমালিনযুক্ত আম অনেকক্ষণ একই রকম রঙ ও টেক্সচার বজায় রাখে।

৬. মাছি ও পোকা না বসা: ফরমালিনযুক্ত আমে মাছি বা পোকা বসে না, কারণ এর গন্ধ ও রাসায়নিক পদার্থ তাড়িয়ে দেয়।

নির্ভরযোগ্য উপায়: সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হলো ল্যাব টেস্ট বা ফরমালিন টেস্ট কিট ব্যবহার করা, যা কিছু বাজারে ও বিশেষ প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যায়।

ফল ফরমালিন মুক্ত করার উপায়

ফলের উপর থাকা ফরমালিন সম্পূর্ণরূপে দূর করা কঠিন, তবে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে তা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। নিচে ফল থেকে ফরমালিন দূর করার কিছু কার্যকর উপায় দেওয়া হলো:

১. পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রাখা: ফলগুলো সাধারণ বা ঠান্ডা পানিতে ৩০–৬০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে ফরমালিন কিছুটা ধুয়ে যায়। চাইলে চলমান পানির নিচে ৫–১০ মিনিট ধুয়ে নিতে পারেন।

২. লবণপানিতে ভিজানো: ১ লিটার পানিতে ১ চা চামচ লবণ মিশিয়ে ফল ২০–৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে ফরমালিনের পরিমাণ কিছুটা কমে যেতে পারে।

৩. ভিনেগার (সirka) বা লেবুর রস: পানিতে ১–২ টেবিল চামচ ভিনেগার বা লেবুর রস মিশিয়ে তাতে ফল ভিজিয়ে রাখলে ফরমালিনের প্রভাব কিছুটা কমে যায়।

৪. গরম পানিতে ডুবানো (৫০–৬০°C): হালকা গরম পানিতে (উত্তপ্ত নয়) ৫–১০ মিনিট ফল ডুবিয়ে রাখলে কিছু রাসায়নিক দূর হয়।

৫. খোসা ফেলে খাওয়া: ফলের খোসায় বেশি ফরমালিন জমে থাকতে পারে। তাই খোসা ফেলে খাওয়াই নিরাপদ।

৬. সূর্যের আলোতে কিছুক্ষণ রাখা: ফল ১–২ ঘণ্টা রোদে রেখে তারপর ধুয়ে খাওয়া যেতে পারে, এতে কিছু রাসায়নিক দূর হয় (বিশেষ করে ভেজা অবস্থায় রাখলে ভালো)।

৭. প্রাকৃতিকভাবে পাকা ফল কিনুন: গন্ধ, রঙ, ও ত্বকের ভিন্নতা দেখে প্রাকৃতিক পাকা ফল চেনার চেষ্টা করুন।

বিশেষ পরামর্শ: ফরমালিন দূর করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো — বিশ্বস্ত, পরিচিত উৎস থেকে ফল কেনা এবং যতটা সম্ভব ঘরেই পাকানো ফল খাওয়া।

ফরমালিন এর কাজ কি?

ফরমালিন (Formalin) একটি রাসায়নিক দ্রব্য, যা মূলত ফর্মালডিহাইড (Formaldehyde) গ্যাসকে পানিতে দ্রবীভূত করে তৈরি হয় (সাধারণত ৩৭-৪০% ফর্মালডিহাইড দ্রবণে)। এর প্রধান কাজগুলো হলো:

১। জৈব পদার্থ সংরক্ষণ: ফরমালিন জীবাণুনাশক ও সংরক্ষণকারী হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যেমন:
মৃতদেহ সংরক্ষণে (অ্যানাটমি ল্যাব বা হাসপাতালের মর্গে)
জীববিজ্ঞান গবেষণায় প্রাণীর নমুনা সংরক্ষণের জন্য।

২। টিস্যু ফিক্সেশন: টিস্যু সেল বা অঙ্গকে তার স্বাভাবিক গঠন বজায় রেখে সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে, যা পরে মাইক্রোস্কোপে বিশ্লেষণ করা যায়।


৩। জীবাণুনাশক ও কীটনাশক: এটি ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক ধ্বংসে কার্যকর, তাই কিছু ক্ষেত্রে জীবাণুনাশক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।


৪। উৎপাদন শিল্পে ব্যবহার: প্লাস্টিক, রজন (resin), রঙ, ও চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ফরমালিন ব্যবহৃত হয়।

৫। দুর্ব্যবহার: কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ফলমূল, মাছ বা অন্যান্য খাবার দীর্ঘদিন সতেজ দেখাতে ফরমালিন ব্যবহার করে, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

ফরমালিন কেন ব্যবহার করা হয়?

ফরমালিন ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য হলো জিনিসপত্রকে দীর্ঘ সময় সতেজ বা সংরক্ষিত রাখা। যদিও এটি বৈজ্ঞানিক ও শিল্প ক্ষেত্রে বৈধভাবে ব্যবহৃত হয়, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এটি খাদ্যে ব্যবহার করে থাকে, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। নিচে ফরমালিন ব্যবহারের কারণগুলো দেওয়া হলো:

১. খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে (অবৈধভাবে): আম, লিচু, আপেল, আঙুর, কলা ইত্যাদি ফলের চেহারা ও সতেজতা দীর্ঘ সময় বজায় রাখতে। 

মাছ, মাংস, দুধ ইত্যাদি দ্রুত নষ্ট হওয়া খাবার দীর্ঘ সময় ধরে ভালো দেখাতে। মূলত পরিবহনের সময় বা দূর দূরান্তে বিক্রির জন্য খাবারকে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচাতে।

২. মৃতদেহ সংরক্ষণে (বৈধভাবে): হাসপাতালে বা গবেষণাগারে মৃতদেহ পচে যাওয়া রোধ করতে ব্যবহৃত হয়।

৩. গবেষণা ও শিক্ষায়: জীববিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে নমুনা (উদ্ভিদ বা প্রাণীর অংশ) দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য।

৪. শিল্পক্ষেত্রে: প্লাস্টিক, কৃত্রিম রজন (resin), রঙ, কীটনাশক, চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত হয়। খাদ্যে ব্যবহারের কারণ (অবৈধ হলেও যা ব্যবসায়ীরা করে) ফল তাড়াতাড়ি পাকার ব্যবস্থা না থাকলে ফরমালিন দিয়ে "সতেজ পাকা" ভাব তৈরি করে। 

বেশি দিন মজুদ রাখা যায় বলে লোকসান কমানো যায়। ক্রেতার কাছে খাবারটা “তাজা” মনে হয় বলে বিক্রি বাড়ে।

তবে মনে রাখতে হবে, খাদ্যে ফরমালিন ব্যবহার আইনত দণ্ডনীয় ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।

ফরমালিন এর ক্ষতিকর দিক

ফরমালিনের ক্ষতিকর দিক অনেক এবং এটি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যখন এটি খাদ্যে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। নিচে ফরমালিনের কিছু প্রধান ক্ষতিকর দিক উল্লেখ করা হলো:

১. শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি: ফরমালিনের গন্ধ শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করলে কাশি, নিঃশ্বাসে কষ্ট, বুকে জ্বালা ও অ্যাজমা হতে পারে।

২. চোখ ও ত্বকে ক্ষতি: চোখে জ্বালা, অশ্রুপাত, ধোঁয়াশা দেখা এবং ত্বকে এলার্জি বা জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে।

৩. পাচনতন্ত্রের সমস্যা: ফরমালিন মেশানো খাবার খেলে মুখ, গলা, পাকস্থলী ও অন্ত্রে জ্বালা, বমি, ডায়রিয়া বা পেটব্যথা হতে পারে।

৪. লিভার ও কিডনির ক্ষতি: দীর্ঘদিন ফরমালিন গ্রহণে লিভার ও কিডনি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

৫. ক্যান্সারের ঝুঁকি: ফরমালিন একটি কার্সিনোজেনিক (cancer-causing) পদার্থ। এটি নাক, গলা ও ফুসফুসের ক্যান্সার ঘটাতে পারে। 

৬. স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব: মাথাব্যথা, অবসাদ, মনোযোগে ঘাটতি, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

৭. গর্ভস্থ শিশুর উপর প্রভাব: গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে ফরমালিন গ্রহণ করলে গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে সমস্যা হতে পারে বা গর্ভপাত পর্যন্ত ঘটতে পারে।

সতর্কতা: খাদ্যে ফরমালিন ব্যবহার আইনত দণ্ডনীয় এবং তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।

মন্তব্য। ফরমালিন যুক্ত আম চেনার উপায় ও ফল ফরমালিন মুক্ত করার উপায়

আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং পড়ার মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন ফল ফরমালিন যুক্ত আম চেনার উপায় ও ফরমালিন মুক্ত করার উপায়। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তবে প্রিয়জনদের সাথে সেয়ার করুন। আরও নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে www.sumonworld.com এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন পরিদর্শন করুন। ধন্যবাদ ❤️

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url